মৌলভীবাজার: সদ্য সমাপ্ত কোরবানির হাটে গরু নিয়ে আসা জেলার প্রান্তিক খামারিরা লাভের মুখ দেখেননি। তাদের অনেকেই হতাশাগ্রস্ত।
গরুর খামারি আবদুল মছব্বির মৌলভীবাজার স্টেডিয়ামে পশুর হাটে নিয়ে এসেছিলেন ৬টি গরু। এর মধ্যে দুইটি ষাড়গরুর দাম ওঠে সাড়ে তিন লাখ টাকা। কিন্তু দাম মনপূত হয়নি। আরও বেশি দামে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন আবদুল মছব্বির। রাত ৩ টার দিকে ষাঁড় দুটির দাম ওঠে ৮০ হাজার করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে প্রায় অর্ধেক দামেই বিক্রি করতে হয় গরুগুলো। এর ফলে বিশাল আর্থিক ক্ষতিতে পড়েন তিনি।
মৌলভীবাজার উপজেলার দীঘিরপাড় কোরবানি হাটে ঈদের আগের রাতে ষাঁড়সহ ৪টি গরু নিয়ে এসেছিলেন প্রদীপ কুমার। সন্ধ্যায় দুটি ষাঁড়গরুর দাম ওঠে ৮৫ হাজার করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। টানা বৃষ্টির মধ্যে ক্রেতাশূন্য হাটে ষাঁড় দুটি বিক্রি করেন প্রতিটি ৪৫ হাজার করে ৯০ হাজারে। গরু দুটি কিনে নেন সন্ধ্যায় ১ লাখ ৭০ হাজার দাম হাঁকা সেই ক্রেতাই।
রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগানের চাচাতো তিন ভাইবোনকে নিয়ে ৪ বছর ধরে একটি ষাঁড়গরু লালন-পালন করে বড় করেন। তাদের একজনের নাম কাজল। তিনি পেশায় চা শ্রমিক। এই ষাঁড়কে কেন্দ্র করেই বড় হয় তাদের আর্থিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন। ঈদের আগে ষাঁড়টির দাম হয় ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার আশা ছিল আরও বেশি দামের। দারিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসতে আর্থিক সমৃদ্ধ হওয়ার পুঁজিটাও বড় হবে। ঈদের আগের রাতে এই ষাঁড়টিই বিক্রি করতে হয় মাত্র ৭৫ হাজার টাকায়। পরে ক্রেতারা দয়া করে আরও ১৫০০ টাকা বেশি দিয়ে যান কাজলকে।
করোনাকালীন ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি আর টানা বৃষ্টি খামারিদের স্বপ্ন ও পুঁজি শেষ করে দিয়েছে। জেলাজুড়েই খামারিদের গরু বিক্রি হয়েছে পানির দরে। কোরবানির হাটে আসা খামারি ও গরু বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
খামারি আব্দুল জব্বার বলেন, প্রান্তিক খামারিদের কোমর ভেঙে দিয়েছে এ বছরের করোনা-লকডাউনকালীন কোরবানির পশুর বাজার। আমরা দিশাহারা হয়ে গেছি। ভাবতে পারছি না এই ক্ষতি আমরা কিভাবে কাটিয়ে উঠবো।
কোরবানির পশুর হাটে পশু কিনতে আসা শাফায়াত আল রশিদ বলেন, শুরুর দিকে বিক্রেতারা কিছুটা হলেও দাম বেশি চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ বাজারে তাদের একেবারেই কম দামে গরু বিক্রি করতে হয়েছে। যে গরুর দাম ৭০ হাজার হাঁকা হয়েছিলো সে গরুটিই শেষ বাজারে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, এবার জেলায় খামারিদের আর্থিক লোকসান ৭ কোটি টাকার বেশি। তবে স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীদের মতে লোকসানের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো আব্দুস ছামাদ জানান, জেলায় এ বছর ১০ শতাংশ গরুও বিক্রি হয়নি। করোনাজনিত কারণে শেষ দিকে দামমন্দা গেছে। গ্রাহকও কম ছিলেন, প্রবাসীরা ক্রেতারা অনেকেই আসতে পারেননি। সারাদেশেই একই চিত্র, মানুষ বড় গরু কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে।
জানা যায়, জেলায় ৬৮ হাজার গরু প্রস্তুত ছিল। অনেকে খামারে গিয়েই গরু কিনেছেন। অনেক কৃষক গরু ঈদের অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু কৃষক বেশি দামের আশায় ছিলেন, তাদের নিরাশাই জুটেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও লোকসান হয়েছে। এবার বাইরের জেলার গরু বাজারে আসেনি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, ২২ জুলাই, ২০২১
বিবিবি/কেএআর