ঢাকা, শুক্রবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কনস্টেবলের আত্মহত্যার কারণ খুঁজছে পুলিশের তদন্ত দল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২১
কনস্টেবলের আত্মহত্যার কারণ খুঁজছে পুলিশের তদন্ত দল সাইফুল ইসলাম

মেহেরপুর: মেহেরপুরের রতনপুর পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত কনস্টেবল সাইফুল ইসলামের আত্মহত্যার রহস্য খুঁজতে নিবীড়ভাবে কাজ করছে মেহেরপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দল।

আত্মহত্যার পরপরই মেহেরপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

৫৬ দিন ছুটি ভোগ করা, স্বামী স্ত্রী দুজনই এক জেলাতে পোস্টিং ( মুজিবনগর এবং মেহেরপুর সদরে কর্মরত), সুবিধার কথা চিন্তা করে কিছুদিনের মধ্যে তাকে স্ত্রীর কাছে মেহেরপুর সদরে পোস্টিং দেওয়ার পরও কেন পুলিশ সদস্য মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করলো তা খুঁজছে পুলিশের এই তদন্ত দল।

কেন এভাবে নিজেকে শেষ করলো পুলিশ সদস্য সাইফুল তার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সহকর্মী, স্ত্রীসহ পুলিশের কেউ।  

নিহত সাইফুলের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, সাইফুলের বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার চাপড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। চলতি বছরে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের ফজলুর সরকারের মেয়ে ফরিদা খাতুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মেহেরপুরে দুজনেই চাকরি করতেন সেই সুবাদে দুজনের পরিচয় হয় এবং পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে। বয়সে স্বামী-স্ত্রী দুজনে এক বছরের ছোট বড় ছিল। দুজনের বর্তমান কর্মস্থল ছিলো ২০ মিনিট দূরত্বের।  

পুলিশ অফিস সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিয়ে হওয়ায় সাইফুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যেই তাকে ছুটি দিতেন। অনুরূপ ছুটি তার স্ত্রীও ভোগ করতো। দাম্পত্য জীবনও ছিল খুবই মধুর। গত ৬ মাসে সাইফুল ৫৪ দিন ছুটি ভোগ করেছে। শুধু তাই নয় দূরত্ব ঘোচাতে কর্তৃপক্ষ তাকে স্ত্রীর সঙ্গে মেহেরপুর সদরে পোস্টিং দিয়েছিল। ছুটি বেশি ভোগ করায় এই ঈদে সাইফুল ছুটির আবেদনও করেননি। ক্যাম্পে নাইট ডিউটি করাকালীন মাস্ক পড়া অবস্থায় তিনি নিজের অস্ত্রের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। তাহলে এমন কি হলো যে কারণে পুলিশ সদস্য নিজ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করলো। এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে। বিশেষ করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই কারণ খুঁজতে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।  

আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য মেহেরপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম জানান, একজন তরুণ পুলিশ সদস্যের এমন মৃত্যু খুবই দুঃখজনক ও বেদনার। পুলিশ সুপার রাফিউল আলম স্যারের নির্দেশে এই আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ খুঁজতে তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি হয়েছে। একাধিক বিষয় মাথায় নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজও শুরু করে দিয়েছে। আশা করা যায় দ্রুতই বেরিয়ে আসবে এমন মৃত্যুর কারণ কি।

এদিকে নিহত কনস্টেবল সাইফুল ইসলামের চাচা লিটন হোসেন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সহকর্মী নারী পুলিশ সদস্যকে বিয়ে করেছেন ভাতিজা সাইফুল ইসলাম। বিয়ে করতে গিয়ে এবং কিছু জমি কিনতে গিয়ে সে অর্থনৈতিক শুন্যতায় ভুগছিল। কাউকে কিছু দিতে পারবে না বলে এবার ঈদে বাড়িও আসেনি। এই সমস্ত নিয়ে চরম মানসিক অস্থিরতায় ভুগতো সাইফুল। নিজেকে ইদানীং খুব উদভ্রান্তের মত রাখতো। সব কথায় হতাশা প্রকাশ করতো।

স্ত্রী ফরিদা খাতুন জানান, রাতেও তার সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। হতাশার কথা বললে সান্ত্বনা দেন। সবসময় পরিবার পরিজন নিয়ে বেশি চিন্তা করতো। তাই মানসিকভাবে অস্থিরতার মধ্যে চলতো সব সময়।

গত ২১ জুলাই নিজের সরকারি অস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন মেহেরপুরের মুজিবনগর থানার রতনপুর পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত (কন্সটেবল নং ৫৪৩) সাইফুল ইসলাম।

** মুজিবনগরে মাথায় গুলি চালিয়ে পুলিশ সদস্যের আত্মহত্যা

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।