ঢাকা, বুধবার, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফেনীতে নদীর বেড়িবাঁধ নির্মাণে বিএসএফের বাধা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
ফেনীতে নদীর বেড়িবাঁধ নির্মাণে বিএসএফের বাধা

ফেনী: পরশুরাম উপজেলার নিজকালিকাপুর সীমান্তে মুহুরি নদী সংলগ্ন বল্লারমুখার বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সীমান্তে নতুন করে কয়েকটি বাঙ্কার নির্মাণ করেছে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে সীমান্তের লাইট বন্ধ করে কয়েকটি বাঙ্কার খনন করেছে বিএসএফ। বল্লামুখার বাঁধের ৭০ মিটার অংশের ৩০ মিটার নোম্যন্সল্যান্ডে রয়েছে, এমন দাবি করে বিএসএফ বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণের শুরু থেকেই বাধা দিয়ে আসছে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বল্লামুখার বাঁধের ৭০ মিটার নির্মাণে কাজ করার সময় বিএসএফ এসে কয়েকটি স্কেভেটর বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে ভারতের ঈশানচন্দ্র নগর ও বাংলাদেশের নিজ কালিকাপুর ক্যাম্পের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দুপুরে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে সীমান্তে ওই জায়গাটি পরিমাপ করা হয়। বিজিবির পক্ষে মজুমদার হাট কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবদুর রশিদের নেতৃত্বে সেখানে বিজিবি সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনী জেলার পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও ফুলগাজী উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। স্মরণকালের ওই বন্যায় জেলার কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। বন্যায় মুহুরি কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১০২টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। যার মধ্যে মেরামত কাজ শেষ হয় ৯৬টি ভাঙা অংশের। এতে ব‍্যয় হয় ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এ ছাড়া মেরামত কাজ চলমান রয়েছে বল্লামুখার দুটি ভাঙা অংশের। পানির তোড়ে মুহুরি নদীর তীরবর্তী পরশুরামের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের বল্লারমুখা বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে এখানকার বাঁধ পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। এক মাস ধরে বাঁধগুলো পুনর্নির্মাণের কাজ করে আসছে ঠিকাদার।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বল্লামুখার বাঁধ নির্মাণে বাধা দেয় বিএসএফ। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনানুযায়ী শূন্যরেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। তবে সেই বাধা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যেতে ঠিকাদারদের নির্দেশ দিয়েছে বিজিবি।

মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় বিএসএফ বাঁধ পুনর্নির্মাণে বাধা দেয়। বর্ষার মৌসুম আসার আগে নিজেদের বাড়ি-ঘর ও সহায় সম্বল বাঁচাতে বল্লামুখা বাঁধ পুনর্নির্মাণ নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ ইয়াসিন জানান, বিএসএফ সীমান্তে ৫/৬ টি বাঙ্কার খনন করেছে। বাঁধের নির্মাণ কাজ চলাকালীন কাজ বন্ধ করতে বলেছে। তবে বিজিবি তাদেরকে বলেছে, জায়গাটির নোম্যান্সল্যান্ডে পড়েনি। এজন্য কাজ চালু রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ হোসেন বলেন, মোট ৭০ মিটার এলাকায় বাঁধ তৈরি হচ্ছে এর মধ্যে ৪০ মিটার শূন্য রেখার ১৫০ গজের বাইরে। আর ৩০ মিটার ১৫০ গজের ভেতরে।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আপত্তি এই ৩০ মিটার নিয়ে। তারা এর মধ্যে বাঁধ নির্মাণ করতে বাধা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ভারতের জনশক্তি কমিশন ও বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড সরেজমিন পরিদর্শনের পর। যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্তের পর এই অংশ কাজ শুরু হবে।

বাঙ্কার নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরাও দেখেছি বিএসএফ নতুন করে ডিউটি পোস্ট করেছে। এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। সরিয়ে ফেলবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
এসএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।