ঢাকা, শুক্রবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদের পর দিনও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২১
ঈদের পর দিনও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

ঢাকা: আগামী শুক্রবার (২২ জুলাই) ভোর থেকেই ১৪ দিনের সর্বাত্মক ‘লকডাউনের’ ফলে ঈদের পর দিনও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। এদিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এ সময় সদরঘাট ও আশপাশের এলাকায় যানজট লক্ষ্য করা গেছে। সাধারণত ঈদের পরে মানুষ ঢাকায় ফেরে। কিন্তু এ বছর উল্টো চিত্র মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। ঈদের ছুটি শেষ হলেও ‘লকডাউনের’ জন্য মানুষ ঢাকা ছাড়ছে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘুরে দেখা যায়, ঈদর পর দিনও ঘরমুখো মানুষের ভিড়। বেশির ভাগ মানুষ ১৪ দিনের ‘লকডাউনের’ কারণে ঢাকা ছাড়ছে। সবকিছু বন্ধ থাকবে বেকার হয়ে যাবে। এ সময়ে থাকা-খাওয়ারও সমস্যা তাই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছে। এদিনও টার্মিনালে ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীদের এদিক থেকে ওদিক ছোটাছুটি করে নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য লঞ্চ খুঁজতে দেখা গেছে। এতে পন্টুনে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। সেখানে মাস্ক ছাড়াই যাত্রীদের যাতায়াত করতে দেখা গেছে। এ সময় সদরঘাট ও এর আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লঞ্চ ধরতে জ্যামে বসে না থেকে হেঁটে সদরঘাট যাচ্ছেন অনেকেই।  

এদিকে টার্মিনালে কিংবা লঞ্চে কোথাও কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। যাত্রীদের ভিড়ের কারণে নেই শারীরিক দূরত্বও। গাদাগাদি করে রাজধানী ছাড়ছেন ঘুরমুখো মানুষ। লঞ্চের ভেতরে যাত্রীরা একজনের গাঁয়ে লেগে আরেকজন বিছানা করছেন। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। কেউ কেউ খোশগল্পে মেতে উঠেছেন। হকাররা ঝালমুড়ি, আম, আপেল, খেজুরসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে গিয়ে বিক্রি করছেন। তাদের কারও মুখে মাস্ক নেই। হাত পরিষ্কার না করেই খাচ্ছেন কেউ কেউ। ফলে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হচ্ছে না কোথাও।  

এ বিষয়ে বরিশাল রুটের সুন্দরবন-১০ লঞ্চের মাস্টার মো. কামাল বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের পর দিন কখনোই ঢাকা ছাড়ার এতো যাত্রী থাকে না। আগামী শুক্রবার থেকে ১৪ দিনের কঠোর ‘লকডাউন’ শুরু হবে। ফলে আবারও ১৪ দিনের জন্য সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। এ সময় ঢাকাতে বেকার বসে না থেকে লোকজন গ্রামে চলে যাচ্ছেন। ঈদের আগে ভিড় বেশি ছিল তাই তারা আজ যাচ্ছেন। আমরাও আজ গেলে আবার ১৪ দিন পর ‘লকডাউন’ উঠলে ঢাকাতে আসবো। আজ সকালে বরিশাল থেকে মাত্র ২০০ জন যাত্রী নিয়ে এসেছি। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ এখন আর বাড়ি থেকে আসছে না।  

ঢাকা-বরগুনা রুটে চালাচালকারি লঞ্চ এম ভি অভিজান-১০ এর ম্যানেজার বাংলানিউজকে বলেন, সকালে মাত্র ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরেছি। সন্ধ্যায় আবার যাবো। এখন আর খালি যেতে হবে না। লঞ্চ ভরে গেছে, একটু পরেই ছেড়ে দেব। শুক্রবার থেকে ‘লকডাউন’ তাই আগামী ১৪ দিন আর ঢাকায় আসবো না। এ কারণে যাত্রীও একটু বেশি। লোকজন বাড়ি থেকে আসছে কম, যাচ্ছে বেশি।  

ঢাকা-লালমোহন রুটে চলাচল করে গ্লোরী অব শ্রীনগর-২ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. শামীম বাংলানিউজকে বলেন, গত বুধবার (২১ জুলাই) ঈদ গেছে। আগামী শুক্রবার থেকে আবার কঠোর ‘লকডাউন’। সবকিছু বন্ধ তাই আজও ঢাকা ফেরার থেকে যাওয়ার যাত্রী বেশি। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঢাকায় আসছে না। অন্যান্য বছরগুলোতে ঈদের পর দিন এতো যাত্রী ঢাকা ছাড়ে না। এর মূল কারণ ‘লকডাউন’। বেকার বসে না থেকে গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে যাচ্ছে।

বরগুনা যাওয়ার জন্য লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে দাঁড়িয়ে আছেন রাকিব। তিনি বলেন, একটি খাবার হোটেলে কাজ করেন। কখনো ঢাকায় ঈদ করিনি। এবার প্রথম করলাম। আগামী শুক্রবার থেকে ১৪ দিনের ‘লকডাউন’। মালিক বলেছে হোটেল খুলবে না। তাই বাড়ি যাচ্ছি। ‘লকডাউন’ শেষে হোটেল খুললে আবার আসবো।  

গার্মেন্টসে চাকরি করেন আয়শা আক্তার। যাবেন বরিশাল। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গার্মেন্টস খুলবে আগামী ১ আগস্ট। বেকার বসে থেকে কী করবো তাই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। ঈদের আগে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু বেতন-বোনাস পেতে দেরি হয়েছে, তারপর অনেক ভিড় ছিল। নিরিবিলি যেতেই আজ বাড়ি যাচ্ছি। ‘লকডাউন’ শেষ হলে আবার ঢাকায় ফিরবো।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ থেকে বাংলানিউজকে জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো নৌপথ। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৬০টি লঞ্চ দেশের বিভিন্ন রুটে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে গেছে। এ সময়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসেছে প্রায় ৮০টি লঞ্চ। ঈদের পর দিন সাধারণত এতো লঞ্চ যাওয়া-আসা করে না। ‘লকডাউনের’ জন্য যাত্রীর চাপ থাকায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় আজ লঞ্চ একটু বেশি যাওয়া-আসা করছে। আবার আগামী শুক্রবার থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে ১৪ দিনের জন্য।  

এদিকে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে কঠোর বিধি-নিষেধ শিথিল করায় ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে নৌযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবে যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৩ জুলাই সকাল থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান (লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার ও অন্যান্য) চলাচল বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২১
জিসিজি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।