বাগেরহাট: মা, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চার জনের ছোট সংসার আব্দুল হাইয়ের। অভাবের তাড়নায় প্রতিদিন কাজ করতে হয় তার।
একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে পরিবারটির। তাইতো স্বামীর মরদেহের পাশে কাঁদতেও পাড়ছেন না আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী নার্গিস বেগম। একই অবস্থা আব্দুল হাই-নার্গিস দম্পতির অনার্স পড়ুয়া মেয়ে খাদিজা খাতুন ও আব্দুল হাইয়ের বৃদ্ধ মা হাজেরা বেগমের।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকালে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে পিকআপভ্যান ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে নিহত ৬ জনের মধ্যে রামপাল উপজেলার চাকশ্রী বাজার এলাকার আব্দুল হাইও (৫৫) রয়েছেন। বৃদ্ধ মা, অনার্স পড়ুয়া মেয়ে ও স্ত্রীর একমাত্র ভরসার স্থল ছিলেন আব্দুল হাইয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে পরিবারটির উপর আকাশ ভেঙে পড়েছে।
নিহত আব্দুল হাইয়ের মেয়ে খাদিজা খাতুন বলেন, বাবাই ছিল আমাদের সব। সংসারের সবকিছু চলত বাবায় আয়ে। বাবা চলে গেল, এখন কি হবে আমাদের। আমরা কোথায় যাবো- আমাদের তো আর কিছু রইলো না। কে আমার জন্য সন্ধ্যায় খাবার আনবে, বই কিনে দেবে? এই বলে মূর্ছা যান খাদিজা খাতুন।
নিহত শেখ আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী নার্গিস বেগম বলেন, আমাদের তো আর বাঁচার মতো কিছু রইলো না। আমি এখন মেয়ে আর শাশুড়িকে নিয়ে কি করবো, কি খাওয়াবো তাদের।
ছেলে হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বিধবা বৃদ্ধ হাজেরা বেগম। কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। ফিসফিস করে বলছিলেন, আমার নাতি ও বউমাকে এখন কে দেখবে। শুধু আব্দুল হাই নয়, অন্য নিহত পরিবারের অবস্থাও প্রায় একই রকম।
স্থানীয় আবু তালেব বলেন, আব্দুল হাইয়ের পরিবারটি নিতান্তই গরিব। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতো। বাড়িতে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। তিনজন নারী এক প্রকার নিঃস্ব হয়ে গেল বলা যায়। এই অবস্থায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকালে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে পিকআপভ্যানের ধাক্কায় ইজিবাইকের ৬ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার বিকেলে নিহত কয়েকজনের বাড়িতে শোকের মাতম দেখা যায়। একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা অপরদিকে ভবিষ্যতের শঙ্কা। সব মিলিয়ে এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি পরিবারগুলো। তাই তো কখনো কাঁদছেন, আহাজারি করছেন, কখনো আবার শোকে নির্বাক হয়ে যাচ্ছেন।
আরেক নিহত নয়ন দত্তের ভাই বাসুদেব দত্ত বলেন, পাঁচ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পরে সবকিছু নয়নই সামলাত। আমার ভাইয়ের ওপরেই নির্ভর করে চলত আমাদের সংসার। আমরা তো পথে বসে গেলাম। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে মা বেঁহুশ। এখনও হুশ ফেরেনি। কি হয় ভগবান জানেন।
নলদা মৌভোগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান মুক্তি বলেন, নিহত ৬ জনের দুজন এই এলাকার। পান বিক্রির আয়েই পরিবার দুটি চলত। উপার্জনক্ষম প্রধান দুজনকে হারিয়ে তাদের আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেল।
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম বলেন, নিহত প্রতিটি পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ভবিষ্যতেও যেকোনো প্রয়োজনে নিয়মের মধ্যে থেকে পরিবারগুলোকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২১
আরএ