বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় আলোচিত শিশু শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহার রহস্যজনক মৃত্যুর জট খুলেছে।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, শিক্ষকের বেত্রাঘাত ও প্ররোচনায় আত্মহত্যা করে স্থানীয় দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমির ৩য় শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহা।
আর এ বিষয় উল্লেখ করে অভিযোগপত্র এরইমধ্যে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা আগৈলঝাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান।
অভিযোগপত্রে স্থানীয় দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমির শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইককে একমাত্র আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন।
চার্জশিটে নোহার স্কুলের শ্রেণি শিক্ষক উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের মো. আব্দুল লতিফ পাইকের ছেলে শফিকুল ইসলাম সুমন পাইকের বিরুদ্ধে শিশু শিক্ষার্থী নোহার আত্মহত্যায় প্ররোচনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শিশু শিক্ষার্থী নোহা নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দেওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে ওই উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের সুমন মিয়ার মেয়ে এবং দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমির ৩য় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ ঘটনায় শিক্ষক সুমন পাইককে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন তার বাবা।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর করোনার মধ্যে সরকারের আইন অমান্য করে নোহার স্কুলের মাসিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয় ৯ সেপ্টেম্বর। ওই পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষার্থী নোহা ৩০ নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় স্কুলের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক নোহাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ক্লাসরুমে গালমন্দ করে এলোপাথাড়ি বেত্রাঘাত করে আহত করেন।
নোহা স্কুল থেকে বাড়ি গিয়ে শিক্ষকের মারধর ও গালমন্দ সইতে না পেরে ঘরের দোতলায় আড়ার সঙ্গে নিজের ওড়নার সঙ্গে গামছা জোড়া লাগিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় নোহাকে তার বাবা উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক পয়সা আদর্শ জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক নোহাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মেয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে নোহার বাবা সুমন মিয়া নোহার স্কুল শিক্ষক সুমন পাইককে অভিযুক্ত করে ১০ সেপ্টেম্বর আগৈলঝাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরেই আত্মগোপনে চলে যায় অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন পাইক।
নোহার বিদ্যালয় ম্যানেজিংক কমিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন ১২ সেপ্টেম্বর পরিচালনা কমিটির এক জরুরি সভায় মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন পাইককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন পাইক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রলোভনে নোহার পরিবারের সঙ্গে আপোষ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
অন্যদিকে একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর শিশু নোহাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে নোহার মা তানিয়া বেগম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। যেখানে নোহার বাবা ও বাদীর সাবেক স্বামী সুমন মিয়া, নোহার সৎ মা ঝুমুর জামান এবং সুমনের বোন লিপি বেগমকে আসামি করা হয়েছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২১
এমএস/এএটি