ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মাসেতুর পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার, বার বার ধাক্কায় রহস্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২১
পদ্মাসেতুর পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার, বার বার ধাক্কায় রহস্য

ঢাকা: পদ্মাসেতুতে মোট ৪২টি পিলার। এর মধ্যে ৪০টি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে নদীতে এবং দুটি নদীর তীরে।

নদীতে নির্মাণ করা প্রতিটি পিলারে ছয়টি করে পাইলিং করা হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য গড়ে প্রায় ১২৭ মিটার পর্যন্ত।  একটি পিলার থেকে আরেকটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। ফলে পিলারের মধ্যে দীর্ঘ দূরত্ব থাকায় স্বাভাবিকভাবে সেতুতে ধাক্কা লাগার কথা নয়। অন্যদিকে যমুনা সেতুর পিলারের দূরত্ব ১০০ মিটার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সেতুর পিলারের দূরত্ব ৮৭ দশমিক ৫ মিটার।

কাঁচপুর সেতুর পিলারের দৈর্ঘ্য মাত্র ৫৬ মিটার। অথচ এই সেতুর নিচ দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য লঞ্চ চলাচল করে। এসব সেতুর পিলারে ধাক্কা না লাগলেও বার বার পদ্মাসেতু প্রকল্পের পিলারে ধাক্কা লাগছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও চার হাজার টনের বড় বড় জাহাজ ধাক্কা মারলে সেতুর কিছু হবে না। তবুও বার বার ধাক্কা লাগার ঘটনাটি রহস্যজনকভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।  

এদিকে পদ্মাসেতুতে ফেরির ধাক্কা লাগার বিষয়টি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। প্রয়োজনে দক্ষচালক ও ফিটনেস ভালো এমন ফেরি মাওয়া-শিমুলিয়া রুটে পরিচালনা করার আর্জি জানানো হয়েছে।  

সোমবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয় রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর। ফেরিটি মাত্র একদিন আগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া থেকে পদ্মাসেতু এলাকার নৌরুটে এসেছে। অথচ একদিন আগে এসেই ফেরিটি ধাক্কা দিলো সেতুর পিলারে।  

সেতুতে ফেরির বার বার ধাক্কা লাগা প্রসঙ্গে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সেতুতে ধাক্কা লাগার ঘটনাটি আমার কাছে রহস্য লাগছে। সেতুর একটা পিলার থেকে অন্য একটা পিলারের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার বা ৪৯২ ফুট। ফেরি এর চেয়ে অনেক ছোট একটা বিষয়। স্বাভাবিকভাবে সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার কথা নয়। আমরা জানি যমুনা সেতুর এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট। তারপরও যমুনা সেতুতে ধাক্কা লাগে না। গৌমতী সেতুর নিচ দিয়ে বিদেশি জাহাজ চলাচল করে তারপরও ধাক্কা লাগে না। তাহলে কেনো পদ্মাসেতুতে পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগছে। আমার মনে হয়, অদক্ষ চালক অথবা লঞ্চ অথবা ফেরির ফিটনেস নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আমরা কেবিনেট সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু। ৩৯৭ দশমিক ৩ মিটার দৈর্ঘ্য (লম্বা) ও ১৮ দশমিক ১ মিটার চওড়া (প্রস্থ) চার লেনের এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৫০ কোটি টাকা। এই সেতুতে এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দৈর্ঘ্য মাত্র ৫৬ মিটার।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সেতু। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীর ওপর দ্বিতীয় সেতুর উদ্বোধন করা হয়। এই সেতুতে একটি পিলার থেকে অন্য পিলারের দৈর্ঘ্য মাত্র ৮৭ দশমিক ৫ মিটার। এসব সেতুর নিচ দিয়ে পাথরবাহী ও সিমেন্টবাহী জাহাজ চলাচল করে। সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকারবাহী জাহাজও চলে সেতুর নিচ দিয়ে। অথচ নির্মাণের পর থেকে কখনও সেতুর পিলারে কোনো জাহাজ বা লঞ্চের ধাক্কা লাগেনি।

এর আগে শুক্রবার (২৩ জুলাই) পদ্মাসেতুর ১৭ নম্বর পিলারের সঙ্গে শাহজালাল নামে একটি রো রো ফেরি ধাক্কা লেগেছিল। তবে, এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হলেও সেতুর কোনো ক্ষতি হয়নি। তেল খরচ কমাতে সংক্ষিপ্ত পথে চলতে গিয়ে পদ্মাসেতুতে আঘাত করে রো রো ফেরি শাহজালাল। স্রোতের অনুকূলে কম গতিতে চালাতে (২৫০ আরপিএম) গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয় ফেরিটি।

স্রোতের বিপরীতে কিছুটা ওপরের দিকে চালিয়ে পদ্মাসেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ফাঁক দিয়ে নদী পাড়ি দিলে এ ঘটনা এড়াতে পারতেন ফেরির দুই চালক (মাস্টার ও সুকানি)। সেক্ষেত্রে পথটি দীর্ঘ হতো এবং গতিও বাড়াতে হতো। এতে তেল খরচ হতো বেশি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তেল বাঁচিয়ে তা বাইরে বিক্রি করে দেওয়া। পদ্মাসেতুর পিলারে রো রো ফেরি শাহজালালের ধাক্কা লাগার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। প্রতিবেদনে ফেরির দুই চালককে (মাস্টার ও সুকানি) দায়ী করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রধান প্রকৌশলী ও কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন’ প্রকল্পের পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, গোমতী সেতুর এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্ব ৮৭ দশমিক ৫ মিটার। গোমতীর নিচ দিয়ে ট্রলার চলে ও ক্লিংকারবাহী জাহাজ চলে তারপরও আল্লাহর রহমতে কখনও ধাক্কা লাগেনি। কাঁচপুর সেতুর এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্ব মাত্র ৫৬ মিটার। এখানেও কখনো ধাক্কা লাগার কথা উঠেনি। অনেক বড় বড় লঞ্চ চলে এই রুটে। অথচ পদ্মাসেতুর পিলারে কেন ধাক্কা লাগছে। এটা তদন্ত করে দেখা দরকার। তেল বাঁচানোর জন্য দেশের সম্পদে বার বার আঘাত হচ্ছে এটা তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২১
এমআইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।