ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এই ৫ আসামির মধ্যে দু'জনের অবস্থান শনাক্ত হলেও অপর তিন খুনি কোথায় আছেন, সেটা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৫ আসামির মধ্যে বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন খন্দকার আবদুর রশিদ, এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান। পালিয়ে থাকা খুনীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এম রাশেদ চৌধুরী। আর কানাডায় অবস্থান করছেন খুনী নূর চৌধুরী।
এম রাশেদ চৌধুরী:
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনী এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার৷ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আলোচনার পাশাপাশি দেশটিকে বেশ কয়েকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সরকার থেকে এখন জো বাইডেনের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে বাইডেন সরকারের সাথে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে সরকার।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনিও ব্লিনকেনের সঙ্গে টেলিফোনে প্রথম আলাপেই খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। মার্কিন প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এদিকে ২০১৯ সালের ১৭ জুন খুনি এম রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের সব নথি তলব করেছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। এম রাশেদ চৌধুরীর নথি তলবের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হলে তাকে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।
নূর চৌধুরী:
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি এসএইচএমবি নূর চৌধুরী পালিয়ে রয়েছেন কানাডায়। নূর চৌধুরীকে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। একই সাথে সেখানের প্রবাসী বাংলাদেশিরাও নানা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
সর্বশেষ গত ১২ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ক্যারিনা গোল্ডের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর নূর চৌধুরীকে ফেরত চান।
নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ১৯৯৬ সালে কানাডায় যান ভিজিট ভিসায়। সেখানে গিয়ে তারা শরণার্থী হিসেবে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন করেন। তখন থেকেই তারা কানাডায় অবস্থান করছেন। নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে কানাডা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফর করেন। সে সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধও করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন জানিয়েছিলেন, খুনী নূর চৌধুরীকে ফেরত পেতে কানাডার আদালতে লড়বে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কানাডার ফেডারেল আদালত খুনী নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের পক্ষে রায় দেয়। সে অনুযায়ী নূর চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য প্রকাশে কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো বাধা নেই বলেও জানিয়ে দেয় আদালত। কানাডার আদালত থেকে আইনি জটিলতা মীমাংসা করা গেলে নূর চৌধুরীকে ফেরানো সম্ভব হতে পারে।
শরিফুল হক ডালিম:
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি শরিফুল হক ডালিম বিভিন্ন সময়ে লিবিয়া, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে ও পাকিস্তানে অবস্থান করেছেন। ডালিমকে সর্ব শেষ গত বছর স্পেনে দেখা গেছে। তার অবস্থান নিশ্চিত হতে স্পেন সরকারের সাথে যোগাযোগও করেছে বাংলাদেশ। তবে তিনি স্পেনে অবস্থান করছেন কি- না সেটা এখনো স্পষ্ট নয়।
খন্দকার আবদুর রশিদ:
খন্দকার আব্দুর রশিদ বিভিন্ন সময়ে লিবিয়া ও পাকিস্তানে অবস্থান করেছে। পাকিস্তানে তার অবস্থান জানতে পেরে পাকিস্তান সরকারের কাছে তার বিষয়ে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান:
বঙ্গবন্ধুর খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খানকে সর্বশেষ জার্মানিতে দেখা গেছে। তার বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য জার্মান সরকারকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভারত ও পাকিস্তানে পালিয়ে ছিলেন।
আব্দুল মাজেদ:
বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ দীর্ঘ ২০ বছর ভারতে পালিয়ে ছিলেন। গত বছর দেশে ফিরে আসার পর ঢাকায় গ্রেফতার হন তিনি। গত বছর ১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।
আজিজ পাশা:
বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনি আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুন মাসে জিম্বাবুয়েতে পলাতক অবস্থায় মারা যান । তবে তার মৃত্যুর বিষয়ে প্রকৃত তথ্য এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর বক্তব্য:
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও আমরা কাজে লাগাতে চাই। যেসব দেশে খুনিরা অবস্থান করছেন, সেসব দেশের প্রবাসীরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যেম ওই দেশগুলোর সরকারের কাছে চাপ সৃষ্টি করলে ফেরানো সহজ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
এদিকে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের কোনো শিথিলতা নেই। খুনীদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকরে সরকার বদ্ধপরিকর।
উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ১২ খুনির মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এই ৫ জন হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল খুনী মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২১
টিআর/এজে