ঢাকা: ‘সোনার বাংলা গঠনের মজবুত ভিত বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি। বীমা খাতেও বঙ্গবন্ধুর অবদান শুরু থেকেই।
সোমবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগস্ট বাঙালির জীবনে শোকাহত ও অভিশপ্ত মাস, বেদনা আর শোকের দুর্বিষহ স্মৃতির মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময় যখন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতির অশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে সমগ্র বাংলায়। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন। যে মানুষটিকে কারাগারে বন্দি রেখেও পাকিস্তানি হানাদাররা স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন বাংলার মাটিতে নির্মমভাবে সপরিবারে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে গোটা জাতি। ’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলার স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের কল্পনার আবর্তে আর কোনো কিছুই তখন দোলা দিত না। স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকার, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তরণ— এ সব কিছুর অগ্রভাগে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন আন্দোলনের স্থপতি। ছাত্র অধিকার আন্দোলন, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচন এবং একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার পথে তিনি বরণ করেন ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাবাসসহ অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন। দুঃসময় ও হতাশার দেয়াল ভেঙে শোষিত বাঙালি জাতিকে তিনি উপহার দেন একটি ঠিকানা। লাল সবুজ পতাকা খচিত একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এর নামকরণ তিনি নিজেই করেছিলেন। জাতিকে এ দুর্লভ উপহার দানের মাধ্যমে তিনি ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে। পরে বঙ্গবন্ধু থেকে পরিণত হয়েছেন আমাদের জাতির পিতায়। ’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ক্ষতির পরিমাণ এবং ভয়াবহতা ছিল অবর্ণনীয়। তা অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবে না। পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, তখন সারাদেশে মানুষের হাতে টাকা ছিল চার কোটি। বৈদেশিক মুদ্রার কোনো মজুদ ছিল না। মাত্র ১০ হাজারের মতো নথি দিয়ে শুরু হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়। বঙ্গবন্ধু যেদিন টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করেন, সেদিন ঢাকা থেকে মাত্র তিনটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্দেশে আল-বদরের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সব টাকা ১৬ ডিসেম্বর সকালে রাস্তায় আগুন দিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছিল। এমন একটি বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
একটি ধ্বংসস্তূপের ছাই থেকে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। তার নেওয়া যুগান্তকারী পদক্ষেপের সুফল দেশের মানুষ ভোগ করে চলেছে। যার ভিত্তিভূমির ওপর আজ দাঁড়িয়ে আছে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতি। সোনার বাংলা গঠনের মজবুত ভিত বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি। ’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি আর্থিক খাতগুলোর জন্য মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে আর্থিক খাতের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেন তা অকল্পনীয়।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন এফসিএ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। এতে ১৫ আগস্টের সব শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২১
এমআইএস/এমআরএ