ঢাকা: দুর্নীতি রোধে নিজ নিজ সেক্টরে সচিবদের আরো দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দুর্নীতির ক্ষেত্রে তার সরকার জিরো টলারেন্স নীতির পথ ধরেই এগোচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সচিবরাই হলেন প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার। যেখানে ইমোরাল প্রাকটিস হয়, মিসইউজ হয়, সে সব বিষয় প্রত্যেক সচিবকে দেখতে হবে।
দীর্ঘ চার বছর পর বুধবার (১৮ আগস্ট) প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিব/সিনিয়র সচিবদের নিয়ে এক সভায় এই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সচিবরা এবং প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন।
সচিব সভা শেষে বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে প্রধানমন্ত্রী সচিবদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, কোনোভাবে দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।
সুযোগ-সুবিধা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতির প্রবণতাটা দেখা যায়- এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা, প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একদম পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন। যার যে সেক্টর, তারাই দেখবেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও পয়েন্ট আউট করেছেন, যে সচিবদের এগুলো দায়িত্ব। সচিবরাই হলেন প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার। সুতরাং যেখানে ইমোরাল প্রাকটিস হয়, মিসইউজ হয়, সে সব বিষয়ে প্রত্যেক সচিবকে দেখতে হবে।
সরকারি কেনাকাটায় ওপেন টেন্ডার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি ব্যয় কমানোর পাশাপাশি মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি সব কেনাকাটায় ওপেন টেন্ডারের ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে বিভিন্ন ঋণের ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে, যাতে ছোট মাঝারি সবার বিনিয়োগ ঠিক থাকে। সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের কাজ আরো বিস্তৃত করার নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী, যাতে গরিব অসহায় মানুষের সুবিধা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সভায় খাদ্য সচিব প্রথমে খাদ্যের অবস্থা প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। খাদ্য এবং কৃষির সমন্বয় প্রয়োজন। যাতে কোনোভাবেই দেশে খাদ্যের ঘাটতি না হয়। সেটি কৃষিবিভাগ যাতে স্পষ্ট করে দেয়, চাহিদা অনুযায়ী আমাদের উৎপাদন কতটুকু। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়লে আমদানি করবে, আর উদ্বৃত্ত থাকলে তো তা প্রয়োজন নেই। সেজন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা দিয়েছেন, এখন থেকে বসে সেটি ঠিক করে ফেলতে হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু অলরেডি বোরো ধান উঠে গেছে, গত বছর তিনবার বন্যা হয়েছে। যে কারণে গতবার আমন আবাদ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার এখনো তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এখনো পানির স্তর গতবারের চেয়ে অনেক নিচে। সেকারণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, খাদ্য এবং কৃষি দু’জনে বসে একসঙ্গে কাজ করবে। ইরি ধান থেকে দুই/তিনটি ভ্যারাইটি আসছে, সেগুলো প্রোডাকটিভিটি হাইব্রিডের কাছাকাছি।
নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সচিবদের বলা হয়েছে নির্বাচনী ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়িত হলো।
সাতটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হলেও অনির্ধারিত বেশ কিছু বিষয় উঠে আসে। শিক্ষা নিয়ে এক আলোচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ারও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শিক্ষার বিষয়ে কী করা যায়, সেটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পরে প্রথম যে নির্দেশনা উনি (প্রধানমন্ত্রী) দিয়েছেন, অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি একটা কম্পোর্টেবল অবস্থায় আসলে স্কুল-কলেজ খুলে দেবে... সেটাও তারা প্ল্যান-প্রোগ্রাম করেছে। পাশাপাশি সরকারি স্কুল-কলেজ বা ইউনিভার্সিটিগুলোতে যেন শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে বা ডিজিটাল সিস্টেমে, ফুল পেইজে যেটা অনেক জায়গায় চলছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আইবিএতে পুরোপুরি কার্যক্রম চলছে এবং গ্রেজুয়েশনও হয়ে যাচ্ছে।
'সেজন্য প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন যে, শিক্ষা কার্যক্রম যেভাবে হোক, ভার্চ্যুয়ালি হোক বা অনলাইনে হোক, চলুক। পাশাপাশি কম্পোর্টেবল অবস্থায় আসলে যেন এটা খুলে দেওয়া হয়। শিক্ষাসচিবও বলেছেন, তারা একটি প্ল্যান-প্রোগ্রাম করছেন। '
সভায় একজন বাদে সবাই উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তার মধ্যে ১৭ জন বক্তব্য রাখেন। আর ১৩টি এজেন্ডা ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২১
এমআইএইচ/আরএ