বরিশাল: বরিশাল নগরের থানা কাউন্সিল (উপজেলা পরিষদ) কম্পাউন্ডে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। এসময় সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কর্মকর্তা কর্মচারীদের লক্ষ্য করে আনসার সদস্যদের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনার পর থানা কাউন্সিলসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান মধ্যরাতে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, যে অবস্থায় আমি আছি সেখানে বক্তব্য দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। আমার কোভিডে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবা-মা সরকারি বাসভবনের ওপর থেকে দেখছিলেন কি হচ্ছে বাইরে।
তিনি বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৫-২০ জনের একটি দল মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের অফিস কম্পাউন্ডের পাশে ঘোরাঘুরি করছিলো। তখন আনসার সদস্যরা আমাকে জানায়, বেশকিছু ছেলে-পেলে আমাদের কম্পাউন্ডে প্রবেশ করেছে। এটা সিকিউর এলাকা তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা এটা বলেছে। তখন তাদের আমি চলে যেতে বলার জন্য আনসার সদস্যদের বলি। এরপরপরই জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে রাজীব নামে এক ব্যক্তি কারো পারমিশন না নিয়ে, কারো তোয়াকা না করে আমার বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। আমি নিচে নামার আগেই তাদের ঘরের দরজার সামনে দেখতে পাই।
সে তার পরিচয় দেওয়ার পর আমি বললাম এতো রাতে কি কারণে এসেছেন এখানে। তখন সে জানায় নির্দেশনা রয়েছে তাই তারা ব্যানার ছিঁড়ছে। তখন আমি বললাম এটা সরকারি কম্পাউন্ড, এখানে সরকারি অফিস-আদালত রয়েছে, আমরা সরকারি অফিসাররা এখানে থাকি। আর এতো রাতে এখানে এগুলো শোভন নয়, কাইন্ডলি আপনারা চলে যান, কালকে যেটা করার করবেন। পার্টির যা সিদ্ধান্ত সেটা পরে বাস্তবায়ন করার অনুরোধ জানালেও সে বের হয়ে যাচ্ছে না, তো যাচ্ছে না। পরে আমি দাঁড়িয়ে থেকে তারা চলে গেলে মেইন গেট আনসার সদস্যদের সহায়তা আটকে দেই। এরপর আমরা উপরে বাবা মায়ের সঙ্গে বসা। তখন হঠাৎ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৬০-৭০ জন লোক এখানে আসে। আনসার সদস্যরা ভয়ে দৌড়ে উপরে উঠে এসে আমাকে জানায়, স্যার আপনার বাংলোর মধ্যে ৬০-৭০ জন ঢুকতাছে। তারা যখন আমার বাংলোর সামনে তখন আমি ঘর থেকে বের হয়েছি। তখন একজন আমাকে পরিচয় দিলেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান বাবু। তার পাশে বহু লোকজন, সেখান থেকে একজন খুব উচ্চস্বরে আমার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের নাম ধরে গালিগালাজ করছিলো। তখন আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি ভাই আপনার পরিচয়টা। তিনি তখন তার নাম সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বলে জানায় এবং বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দাবি করেন। এসময় তার পাশ থেকে একজন বলছিলো তুই পরিচয় দিয়ে কি করবি? একসময় কথা বলতে বলতে যখন আমার পেছন দিকে লোকজন আসতে শুরু করে, তখন আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাকে ঘিরে ধরা হচ্ছে। তখন আনসার সদস্যদের ইশারা দিলে তারা আমার কাছে চলে আসে। আনসাররা বাঁশি বাজালেও যখন তারা সরছিলো না তখন আনসার সদস্যরা ফোর্স করছে। তখন যে যার মতো করে দৌড়াইছে। আর তখন আমি নিজে মাহামুদ হাসান বাবুর হাত ধরে ফেলেছিলাম এবং আনসারের হাতে তুলে দেই। তাদের বের করে দিয়ে আমাদের গেট আটকে দিয়েছি। তারপরে দুইশ, তিনশ, চারশ না পাঁচশ আমি জানি না, বহু লোক এসে আমাদের সরকারি গেটটাকে ভেঙে তচনছ করে ভেতর থেকে ঢুকে আমার ঘরের বারান্দা পর্যন্ত চলে আসে। ভাগ্যিস আমার উপজেলার অফিসাররা চলে এসে তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা আটকে উপরে নিয়ে যায়। কারণ ওরা নীচতলায় ঘরের ভেতর পর্যন্ত চলে এসেছিলো। যে সিচ্যুয়েশন সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্য দিয়ে না গেলে বোঝা যাবে না।
তিনি বলেন, যে অবস্থায় আমি আছি সেখানে বক্তব্য দেয়ার মতো অবস্থা নেই। আমার বৃদ্ধ কোভিডে আক্রান্ত বাবা-মা ওপর থেকে দেখছিলেন কি হচ্ছে বাহিরে।
আমার পক্ষ থেকে গুলি করার অর্ডার (ডেসপাসের অর্ডার) দেওয়া হয়নি, তবে আমার বাসার সামনে যখন আমাকে ঘিরে ধরা হবে তখন আনসার সদস্যরা তো আমাকে সেভ করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
এমএস/আরএ