বরিশাল: নগরীরর একটি বেসরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থেকে চন্দন সরকার (২৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি আত্মহত্যা করেছেন ওই যুবক।
মৃত চন্দন সরকার বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বড়পাইকা এলাকার চিত্তরঞ্জন সরকারের ছেলে।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে নবগ্রাম রোডের হলি কেয়ার নামে ওই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের চতুর্থ তলার মেঝ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
কোতয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজালাল জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে সুরতহাল রিপোর্ট করে মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃতের গলায় দাগ ছিল, নিরাময় কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা বলেছেন আত্মহত্যা করেছে সে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে, স্বজনরা লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
মৃত চন্দনের মামা নিবাস মহুরী বলেন, আমার ভাগ্নে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আসতে চায়নি। সে বলেছিল, এখানে মারধর করা হয়। আমরা তার কথা শুনিনি। আগস্ট মাসের ৭ তারিখ হলি কেয়ারে দিয়ে গিয়েছি। তখন কোমরের বেল্টটি পর্যন্ত রাখতে দেয়নি। রশি বা গামছাতো দূরের কথা।
তাহলে হত্যায় গামছা পেল কীভাবে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘ভোররাতে হলি কেয়ার থেকে মোবাইলে আমাকে জানানো হয় চন্দন আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করি না। আমার ভাগ্নেকে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আত্মহত্যা করলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকেই মরদেহ উদ্ধার করবে। কিন্তু হলি কেয়ারের লোকজনই সত্য ঘটনা আড়াল করতে বাথরুম থেকে মরদেহ ফ্লোরে এনে রেখেছে। সেখান থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেছে। এটি হত্যাকাণ্ড, আমি এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
হলি কেয়ারের ব্যবস্থাপক মাইনুল হক তমাল দাবি করেন, তাদের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মোট ২৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। এরমধ্যে একজন মারা গেছেন। খবর দেয়া হলে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। বিস্তারিত তারাই বলতে পারবেন।
হলি কেয়ারের চতুর্থ তলার দায়িত্বে থাকা ভলান্টিয়ার সরোয়ার বলেন, রাত সোয়া তিনটার দিকে আমাদের ডেকে তোলা হয়, একজন টয়লেটে আত্মহত্যা করেছে বলে। ওখানে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা গিয়ে দেখতে পান চন্দন সরকার বাথরুমের ভেন্টিলেটরের সঙ্গে গলায় গামছা পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে তাকে সেখান থেকে মেঝেতে এনে রাখা হয়।
বাথরুমের উচ্চতায় কেউ আত্মহত্যা করতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সরোয়ার বলেন, তা বলতে পারব না, তবে মরদেহ সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ভর্তি অন্যান্য রোগীরা জানান, ভলান্টিয়ারের দায়িত্বে থাকা সরোয়ার কথায় কথায় তাদের মারধর করে। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চন্দন সরকারকে মারধর করা হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে সবাই ঘুমাতে যায়, আর শেষ রাতে চন্দন মারা গেছে বলে শুনতে পান।
অভিযুক্ত সরোয়ার এ বিষয়ে বলেন, গতকাল (২৬ আগস্ট) রাতে চন্দন সরকার পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমালে আরেক রোগী তারিকুল নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চন্দন তারিকুলকে ঘুষি মারেন। এ সময়ে চন্দনকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে কয়েকটি ‘থাপ্পড়’ দিয়েছি। কিন্তু তাকে কোন নির্যাতন করিনি।
এছাড়াও নিরাময় কেন্দ্রের নিবাসীরা কখনও নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করলে শালিস তাকেই করতে হয়, সেজন্য সবাই তার ওপর বিরক্ত হয়ে মিথ্যে অভিযোগ তুলছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২১
এমএস/এনটি