ময়মনসিংহ: হাওর-বাওড়, খাল-বিল ও নদীতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে কাকিলা মাছের দেখা মিলতো, কিন্তু পুকুরে চাষ করা যেত না। লম্বা ঠোঁটওয়ালা ‘কাকিলা’ মাছ ভোজনরসিকদের বেশ প্রিয়।
কাকিলা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Xenentodon cancila। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ মাছ গাঙতুরি, কাকিয়া, কাখলে, কাখুয়া, কাইকলা বা কাইক্ক্যা নামেও পরিচিত। এ মাছের পিঠের দিকটা ধূসর ও সবুজাভাব, অঙ্কীয় পাশটা সাদাটে এবং পার্শ্বীয় দিক সবুজাভাব রূপালি, যার মধ্যে তীর্যকভাবে অবস্থিত অনেকগুলো আড়াআড়ি দাগ দেখতে পাওয়া যায়। চোয়াল দুটি লম্বা ও শক্ত। প্রতিটি চোয়ালে এক সারি তীক্ষ দাঁত রয়েছে।
বিএফআরআই গবেষক দলের সদস্যরা জানান, একসময় অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে কাকিলা মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং বাসস্থান ও প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ মাছের প্রাচুর্যতা ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। এটি বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলোর অন্যতম। প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন ও জিন সংরক্ষণের মাধ্যমে কাকিলা মাছ আরও সহজলভ্য হবে এবং বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
গবেষক দলের প্রধান রবিউল আউয়াল হোসেন জানান, কাকিলার দেহ লম্বা। দেশে যে জাতটি পাওয়া যায়, সেটি মিঠাপানির জাত। পরিণত পুরুষ মাছের মাথার শীর্ষে লাল চূড়া দেখতে পাওয়া যায়, যা থেকে সহজেই স্ত্রী ও পুরুষ মাছ আলাদা করা যায়। এটি শিকারি মাছ। মূলত ছোট মাছ খেয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে প্রবহমান জলাশয়ে, বিশেষ করে নদীতে এবং বর্ষাকালে প্লাবিত অঞ্চলে প্রজনন করে থাকে। কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন বিশ্বে এটিই প্রথম।
বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদী থেকে পরিপক্ব কাকিলা মাছ সংগ্রহ করে যশোরের স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের পুকুরে ছাড়া হয়। পরে হ্যাচারিতে উৎপাদিত মাছের জীবিত পোনা এবং বিভিন্ন জলাশয় থেকে সংগৃহীত ছোট মাছ খাইয়ে পুকুরের আবদ্ধ পরিবেশে মাছকে টিকে থাকতে অভ্যস্ত করা হয়। এরপর চলতি বছরের মে মাস থেকে কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশে বিভিন্ন হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। অবশেষে ২৫ আগস্ট প্রজননকৃত মাছের ডিম থেকে পোনা বের হয় এবং কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য অর্জিত হয়।
গবেষক দলের বৈজ্ঞানিক কমকর্তা শিশির কুমার দে জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী কাকিলা মাছে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রোটিন, ২ দশমিক ২৩ শতাংশ লিপিড, ২ দশমিক ১৪ শতাংশ ফসফরাস এবং শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ ক্যালিসিয়াম রয়েছে, যা অন্যান্য ছোট মাছের তুলনায় অনেক বেশি।
বিএফআরআই মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, দেশের বিলুপ্তপ্রায় ৬৪টি প্রজাতির মাছের মধ্যে ৩০টির কৃত্রিম প্রজননে ইতোমধ্যে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সফলতা অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৩১তম মাছ হিসেবে কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল যুক্ত হলো। সব বিপন্ন প্রজাতির মাছ পর্যায়ক্রমে কৃত্রিম প্রজননের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২১
আরএ