ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ভাঙা হচ্ছে সূত্রাপুরের হেলে পড়া ভবন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২১
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ভাঙা হচ্ছে সূত্রাপুরের হেলে পড়া ভবন ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নিরাপত্তা মুলক ব্যবস্থা ছাড়াই ভেঙে ফেলা হচ্ছে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের কুলুটোলা এলাকার ৪৭/২ তনুগঞ্জ লেনে ছয়তলা বাড়ি। গত বৃহস্পতিবার হেলে পড়ে বাড়িটি।

এর ফলে ভবনটির পূর্ব পাশে থাকা দুইটি ভবনও ঝুঁকির রয়েছে। ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ভবনের বাসিন্দাদের। এদিকে ভবন ভাঙতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন আশেপাশের ভবনের বাসিন্দারা।

শনিবার (২৮ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়িতে ঢুকতে হয় পায়ে হাঁটার সরু একটি গলি দিয়ে। পাশাপাশি দুটি ভবনে কাউকে আর না থাকার অনুরোধ জানিয়ে একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘হাজী বাড়ী, এত টুকু বাসা’ নামে ওই বাড়িটি ১৯৯৫ সালে ডোবা ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানালেন স্থানীয়রা। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ইতোমধ্যে দুটি বাড়ি থেকেই মালিকসহ সব ভাড়াটিয়াকে সরিয়ে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশন।

এদিকে শনিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদসহ সংশ্লিষ্টরা ভবন ভাঙার কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। এর আগে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) ছয়তলা ভবনটি ভেঙে ফেলার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। চলতি মাসের ১৯ তারিখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত ‘হাজী বাড়ী’ নামে ভবনটি হেলে পড়ে। সেদিনই রাজউক চেয়ারম্যান, দক্ষিণ সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সভাপতি, প্রধান প্রকৌশলীসহ সিটি করপোরেশন, তিতাস গ্যাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পরবর্তীতে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা, ডিএসসিসির ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি ও আঞ্চলিক কমিটির সদস্যরা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে একমত পোষণ করেন এবং ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেখানে স্টিকার সাটিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন ভবনটি সিলগালা করে দেয়।

পরিদর্শনে এসে রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী সাংবাদিকদের বলেন, হেলে পড়ার ভবনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ ভবনটি যে অনুমোদন দিয়েছেন বা এ অঞ্চলের যে দায়িত্বে ছিল যদি তার দায় দায়িত্ব থাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার কমিটিতে এ এলকার সংশ্লিষ্ট অফিসারকে রাখা হয় নি। কমিটি খুজে বের করবে ব্যার্থতা কোথায় আছে। এছাড়া ভবনটি ভাঙার জন্য যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০০৮ সালের আইনানুযায়ী সংশ্লিষ্ট  অফিসার কি এ দায় এড়াতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের বিধিতে স্পষ্ট বলা আছে রাজউকে যতটুকু দায়ী তার পাশাপাশি একটা ভবনের লে-আউট দেওয়া হয়। এতে ভবন নির্মাণে যিনি কারিগরি প্রতিনিধি বা ইঞ্জিনিয়ার তারাও সমভাবে দায়ী। এখানে এককভাবে রাজউকে দায়ী করলে হবে না। এর সঙ্গে বাড়ির মালিক, রাজউক, দায়িত্ব প্রাপ্ত স্থপতি, প্রকৌশলী রয়েছে। আমাদের তদারকির অভাব রয়েছে সেটা অস্বীকার করবো না। দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারাও অবহেলা করে সেটাও অস্বীকার করবো না। তাই সবাইকে মিলে ও জনগণকে আমাদের সঙ্গে আনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা বাড়ির মালিক ও ভবনের বাসিন্দারা যদি সচেতন না হয় তাহলে যতোই আইন করেন কোনো কিছু ঠিক করা যাবে না।  

এ বিষয়ে ভবনের মালিক শামীমা আরা ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, এই বাড়িটি আমার শ্বশুর তৈরি করেছেন। বাড়ির কোনো প্লান আমার কাছে নেই। আমার স্বামী কয়েক বছর হলো মারা গেছেন। এখন আমি ও আমার সন্তান ও দুইটি ভাড়াটিয়া নিয়ে এই বাড়িতেই ছিলাম। এখন হঠাৎ রাস্তায় এসেছে পড়েছি। আমাকে কোনো সময় দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, আমি সেপ্টেম্বরের এক তারিখে এমনিতেই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতাম। ইতোমধ্যে ভাড়াটিয়াদের বাসা ছাড়া নির্দেশও দিয়েছি। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকজন উদ্দেশ্য মুলকভাবে বিষয়টি রাজউকে জানালে। বিষয়টা খুব দ্রুতই করতে হচ্ছে। আজ শুধু ভবনের জানলা ও দরজা ভাঙা হচ্ছে। পরে যখন দেওয়াল ভাঙবে তখন চারপাশে চট দিয়ে দেওয়া হবে। আমি নিজ খরচে ভবনটি ভাঙছি। একজনকে কন্টাক্ট দিয়েছি সে ভবনটি ভেঙে দিবেন।

পাশের ভবনের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে থাকি। এই বাড়িটি আমার চোখের সামনেই উঠেছে। চারতলার পাইলিং করেছে। কিন্তু পরে দেখি ছয় তলা বাড়ি। অনেক দিন ধরে ভবনটি আস্তে আস্তে পূর্ব পাশে একটু একটু করে কাত হতে থাকে। গত ১৯ তারিখ রাজউক ও সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন ও ভাঙার নির্দেশ দেন। এরপর এ ভবন ও পাশের ভবন সিলগালা করে দেওয়া হয়। আজ সকাল থেকেই ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে কিন্তু কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা প্রতিদিন এখন দিয়ে যাতায়ত করি। উপর থেকে ইট পড়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২১
জিসিজি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।