ঢাকা, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রামু রাবার বাগান: বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য সোফাটি এখনও আছে

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
রামু রাবার বাগান: বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য সোফাটি এখনও আছে

কক্সবাজার: ‘১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, সেদিন ছিল মঙ্গলবার। বিমানে করে কক্সবাজার এসে বঙ্গবন্ধু প্রথমে সমুদ্র সৈকতে ঝাউচারা রোপণ করেন।

সেখান থেকে চলে আসেন রামুতে। ’ 

‘রামু উপজেলা গেট থেকে চৌমুহনী স্টেশন পর্যন্ত জলের ফোয়ারা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বেশ কিছু গেটে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য নানা আয়োজন করেছিলাম আমরা। কিন্তু তিনি গাড়ি থেকে নামেননি, নেননি সংবর্ধনাও। তবে আমরা তাঁর গাড়ির ওপর ফুল ছিটিয়েছি। অনেকটা পুষ্পবৃষ্টির মতো করে। এরপর সরাসরি তিনি গাড়ি নিয়ে রামু রাবার বাগান চলে যান। ’

এভাবেই বঙ্গবন্ধুর রামু সফরের স্মৃতিচারণ করছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রামুর সাবেক এমইউপি গোলাম কবির মেম্বার।

শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু যতবার রামুতে এসেছেন অন্য অনেকের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছেন গোলাম কবির। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা।  

বাংলানিউজকে গোলাম কবির বলেন, ‘সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাবার শিল্পের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আগে বাগানের মাটিতে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত রাবার সংগ্রহ করা হতো না। সেদিন তিনি বাগানে ঢুকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ওইদিনই পরিত্যক্ত রাবার সংগ্রহের নির্দেশ দেন। তিনি উদাহরণসরূপ বলেছিলেন, ভালো রাবার বিশ টাকা হলে এগুলো তো অন্তত অর্ধেক দামে বেচা যাবে। ’

সেদিন থেকে এখনও পর্যন্ত রামু রাবার বাগানে পরিত্যক্ত রাবার সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান গোলাম কবির।

গোলাম কবির আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একই দিন কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডীতে লবণ শিল্পের উন্নয়নে লবণ চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি লবণের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর এ সফর নিয়ে পরদিন (১২ ফেব্রুয়ারি, ১৭৭৫) তৎকালীন জাতীয় পত্রিকা দৈনিক বাংলা’য় ছবিসহ প্রধান প্রতিবেদন করা হয়েছিল। তারা হেডলাইন দিয়েছিল- ‘লবণ সরবরাহ সুনিশ্চিত করার নির্দেশ’, সাবহেড ছিল- ‘জরুরি কর্মসূচির মাধ্যমে রাবারে স্বনির্ভর হতে হবে-বঙ্গবন্ধু। ’

সেই সোফাটি সংরক্ষিত আছে রামু রাবার বাগানে
সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে রামু রাবার বাগান রেস্ট হাউজে গিয়ে দেখা গেছে, যে সোফাটিতে বঙ্গবন্ধু বসেছিলেন সেটি ড্রইংরুমের এক কোণায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

একটি কাঁচের বক্স বানিয়ে চেয়ারটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। বক্সটির ঠিক ওপরে রাখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর রাবার বাগান পরিদর্শনের ছবিসহ একটি বাঁধাই করা তথ্যচিত্র। এর ওপরে রাবার গাছের সামনে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি।

রামু রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৯৭০ ও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু দু’বার রামু রাবার বাগানে আসেন। এ কারণে এই বাগান এবং রেস্ট হাউজে তাঁর নানান স্মৃতি রয়েছে। এখানে এসে বঙ্গবন্ধু একটি সোফায় বসেছিলেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে সেই সোফাটি আমরা কাঁচের বক্সে সংরক্ষণ করে রেখেছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নামটি শুনলেই যেকোনো মানুষের বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা চলে আসে। ওই শ্রদ্ধার জায়গা থেকে এখানে যেটি হয়েছে, বঙ্গবন্ধু যে সোফায় বসেছেন, এ বিষয়টি কেউ জানলেই সেটাতে আর বসতো না। ’

‘সালটি আমার মনে নেই। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সংরক্ষণের চিঠি আসে। ওই চিঠি ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষার্থে সোফাটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ’

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কবির এ বিষয়ে সহযোগিতা করেন বলে জানান রামু রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক।

রামুর প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যজন মাস্টার মো. আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহান ব্যক্তির পা রামুতে পড়েছিল, এটা রামুবাসী হিসেবে আমাদের জন্য অনেক গর্বের বিষয়। তাঁর স্মৃতিধন্য সোফাটি সংরক্ষণের জন্য রাবার বাগান কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। নতুন প্রজন্মের কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে আমরা কয়েক বছর ধরে রামুতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় সোফাটি প্রদর্শনী করে আসছি। ’

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য সোফাটির বিষয়ে অবগত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো এটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করি। নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতে রামুর বিশেষ অনুষ্ঠানে সোফাটির প্রদর্শন করা হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
এসবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।