ঢাকা: বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এমনিতেই বেশ নাজুক। কোভিড-১৯ মহামারি সে সংকট আরো গভীর করে তুলেছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) এর যৌথ আয়োজনে হওয়া ‘করোনাকালে মাতৃস্বাস্থ্য এবং বাবার দায়িত্ব’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন।
তাদের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশে মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন ঝুঁকি, মাতৃত্বকালীন সময়ে সন্তানের বাবা ও পরিবারের দায়িত্ব, মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব এবং করোনাকালে প্রসূতিসেবার সংকটগুলো।
বিএইচআরএফ এর সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বির সঞ্চালনায় সোমবার (৩০ আগস্ট) সকালে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল।
ওয়েবিনারে মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মুরাদ আহমেদ। এছাড়া, অনুষ্ঠানে আরো যোগ দেন ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড (ইউসিএল) এর করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান শামীমা আক্তার, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম এর সভাপতি তৌফিক মারুফসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।
ওয়েবিনার অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। তিনি বলেন, ‘করোনা ও লকডাউনের কারণে নিম্নআয়ের পরিবারগুলোতে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিবারের উপর্জনকারী ব্যক্তি যেমন বাবারা কর্মহীন হওয়ায় তারা সন্তানের মায়ের যথাযথ যত্ন নিতে পারছেন না। মাতৃস্বাস্থ্যের গুরুত্বের বিষয়টি এ সময়ে আরো বেশি করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। ’
তিনি আরো বলেন, বাবাদের উচিত মাতৃত্বকালীন সময়ে সন্তানের মায়েদের প্রতি আরো যত্নবান হওয়া ও মায়েদের কাজগুলো ভাগ করে নেওয়া। একইসঙ্গে মা ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও বাবাকে ভাবতে হবে। কোভিড-১৯ সময়ে এ বিষয়টিও নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, আমাদের দেশে প্রথমবার গর্ভধারণ করা অধিকাংশ মা-ই কিশোরী। মা হতে গিয়ে তাদের যে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে হয় তা পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবেন না। প্রসবকালীন ঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার ফলে দেশে মাতৃমৃত্যুর ৫৪ শতাংশ ঘটে বাড়িতে। করোনাকালে মায়েদের সেবাকেন্দ্রে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা আরো বেড়েছে। পরিবার ও সন্তানের বাবার সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের এখন এক সামাজিক যুদ্ধে নামতে হবে।
ডা. মুরাদ আহমেদ তার প্রেজেন্টেশনে মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, মায়েদের অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা ও বাল্যবিবাহের মতো সংকট তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এমনিতেই অপুষ্টিতে ভোগেন। এরসঙ্গে করোনাকালে যোগ হয়েছে বাল্যবিয়ের বাড়তি ঝোঁক। অল্প বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত মায়েদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের ভাবতে হবে। আশার বিষয় হচ্ছে মায়েরা এখন চাইলে কোভিড-১৯ টিকা নিতা পারছেন। সর্বোপরি মাতৃত্ব নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেওয়া চলবে না।
অনুষ্ঠানে ইউসিএল এর করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান শামীমা আক্তার বলেন, করোনাকালে মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা ও মায়ের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভেবেই বিএইচআরএফ’কে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই ওয়েবিনারের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া মাতৃদুগ্ধ পান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও উৎসাহ তৈরি করতে ‘হরলিক্স মাদার’স প্লাস’ ইতোমধ্যে মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে আমাদের এসব পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।
মাতৃস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই ওয়েবিনার আয়োজন করায় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম এর সভাপতি তৌফিক মারুফ তার বক্তব্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) এর সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।
জানা যায়, সম্প্রতি পালিত হওয়া ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২১’ উপলক্ষে ইউসিএল ব্র্যান্ড ‘হরলিক্স মাদার’স প্লাস’ মাসব্যাপী নানান কর্মসূচির আয়োজন করে। সামাজিক সচেতনতামূলক এসব কার্যক্রমের মধ্যে ছিল সচেতনতামূলক ভিডিও প্রকাশ, অনলাইনে আলোচনা ও পরাপর্শ সভা আয়োজন, প্রসূতি মায়েদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
এসই/আরএ