ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কায় ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২১
‘পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কায় ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছি’

ঢাকা: পদ্মা সেতুতে ফেরি ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলেছি, এটা গভীরভাবে তদন্ত করতে হবে এবং অবশ্যই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে হবে। সিনিয়র মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও আজকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার জন্য ১৩ দিন ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এজন্য মানুষের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা আমাদের অপরাধী ভাবছি। এখন তো মনে হচ্ছে এটা পদ্মা সেতুর আঘাত না, আঘাত আমাদেরই করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সেতু বিভাগের লোকজন জানিয়েছেন, তারা স্প্যানে ধাক্কার কোনো চিহ্ন পাননি। কিন্তু আমরা ভিডিওতে দেখলাম ফেরি ধাক্কা দিচ্ছে। ভিডিওতে স্পস্ট দেখেছি মাস্তুল বাড়ি খেয়ে পড়ে গেল। বলা হচ্ছে ওটা লোহার, লোহার হলে তো পড়ে যাবে না, বেঁকে যাবে এবং ঘষা খাবে। কিন্তু ঘষার কোনো চিহ্ন নেই। এই সংবাদগুলো কেন আসছে, এটারও একটা তদন্ত হওয়া দরকার। আমার কথা ভুল হলে আমি খুশি হবো যে, এটার মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র নেই।

পদ্মা সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী স্প্যানে কোনো নৌ-যানের ধাক্কা লাগার কথা নয়, কিন্তু কেন ধাক্কা লাগলো জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা তো আমাদেরও প্রশ্ন। পদ্মা সেতুর যে নকশা করা হয়েছে, সেই নকশা অনুযায়ী যে উচ্চতা থাকার কথা, সেখানে কোনোভাবেই ওপরের স্প্যানে আঘাত লাগার কথা নয়। আজকে এটা হয়েছে, কেন হয়েছে? আমরা বলেছি, এটার নিবিড় তদন্ত করতে হবে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত বা এর পেছনে অন্য কিছু উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা চাই এটার সঠিক তদন্ত হোক। অপরাধী যেই হোক, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

এর আগেও পদ্মা সেতুতে আঘাত লেগেছে সে ঘটনায় তদন্তে কী বের হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ বলেন, আগের ঘটনাগুলোতে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য পাওয়া যায়নি। সেগুলো দুর্ঘটনাই ছিল। আমি বলেছিলাম, উদাসীনতা ও দুর্বলতা আছে। সে ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

ঘাট স্থানান্তরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মাঝিরকান্দি ঘাট বিকল্প হতে পারে। এসব ঘটনার পর আমাদের মাস্টারদের মধ্যেও ভীতি তৈরি হয়েছে। আবার যদি কোনো ঘটনা ঘটে যায় তাহলে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সেজন্য আমরা মাঝিরকান্দি ঘাট প্রস্তুত রেখেছি। সেখানে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। নাব্যতা ও রাস্তার বিষয়টি ক্লিয়ার হলে হয়তো আমরা হালকা যানবাহন পারাপার করতে পারবো। কারণ এখানে ইয়ার্ড করার কোনো সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ একটা জায়গা দেবে ইয়ার্ড করার জন্য।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে অনেক ফেরির ফিটনেস নেই। গত ১২ বছরে আমরা ২৩টি ফেরি যুক্ত করেছি। আমাদের আরও ফেরি প্রয়োজন। মানুষের চাহিদার জন্য আমাদের ঝুঁকি নিয়ে ফিটনেস বিহীন ফেরিগুলো চালাতে হয়। অবশ্য ফেরিগুলো প্রতিদিন মেইনটেনেন্স করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গতকাল ডকইয়ার্ড থেকে পানিতে নেমেছে।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিমুলিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাওয়ার পথে পদ্মা সেতুর ২ ও ৩ নম্বর পিলারের মাঝখানে ‘ওয়ান বি’ স্প্যানের সঙ্গে ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ধাক্কা লাগে। এতে ফেরির মাস্তুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে দুর্ঘটনার সময় ফেরিতে কোনো যাত্রী বা যানবাহন ছিল না।

এর আগে মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ায় নৌপথে চলাচলের সময় চারবার পদ্মা সেতুর পিলারে আঘাত করে ফেরি। এর মধ্যে ২০ ও ২৩ জুলাই ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারে এবং ৯ ও ১৩ আগস্ট ১০ নম্বর পিলারে আঘাত লাগে। সে সব ঘটনায় থানায় জিডি, তদন্ত কমিটি গঠন, ফেরি চালকদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।