ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাবরিনা-সাহেদের মতোই টিকেএস’র প্রতারণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১
সাবরিনা-সাহেদের মতোই টিকেএস’র প্রতারণা

ঢাকা: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জাকিয়া পারভীনের সীল-স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া প্রজ্ঞাপন ও অনুমতিপত্র তৈরি করে লোক নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে টিকেএস নামের এক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কোভিড টেস্ট, লোক নিয়োগ, ক্যাম্প স্থাপনের ভুয়া অনুমতি ব্যবহার করে ঢাকা এবং ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর এবং ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে কর্মী নিয়োগের নামে এই প্রতারণা করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

যদিও স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত কোনো রকম সনদ এবং অভিজ্ঞতা নেই।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাল অনুমোদনকৃত কোভিড টেস্টের নামে প্রতিষ্ঠানটি ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে রয়েছে।

গত ৩১ আগস্ট থেকে ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা ও ঝালকাঠি জেলা থেকে তিন প্রতারককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি দল।

গ্রেফতার প্রতারকরা হলেন- মূলহোতা ও প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল্লাহ আলামিন, চেয়ারম্যান আবুল হাসান তুষার ও মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহিন মিয়া। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, ট্যাক্স সার্টিফিকেট বিভিন্ন ধরনের জাল নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছে, টিকেএস প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যসেবা ও লোক নিয়োগের নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। প্রতারক চক্রটি ইতিপূর্বে গ্রেফতার হওয়া জেকেজি’র সাবরিনা কিংবা রিজেন্টের সাহেদের মতোই অপকর্ম শুরু করেছিল।  

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বরণীতে অবস্থতি আল-রাজি কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় ফ্লোরকে নিজেদের কার্যালয় সাজিয়ে গত ১১ জুলাই টিকেএস গ্রুপের (TKS Group) সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিকেএস হেল্থ কেয়ার সার্ভিস (TKS Healthcare Service) নামের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। এরপর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করে। আবেদনে তারা বাংলাদেশের আটটি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪৯২টি উপজেলা এবং ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়নে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করা এবং তাদের মোট ৫ হাজার ১২৬ জন সম্মুখযোদ্ধা প্রস্তুত আছে মর্মে আবেদনে উল্লেখ করে।

চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী আব্দুল্লাহ আল আমিন CIB (Care Givers institute of Bangladesh) এর মার্কেটিং ম্যানেজার এবং আবুল হোসেন তুষার আদফালাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক রিলেশনশিপ ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতো। পূর্বে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতাকেই তারা অপকর্মে ব্যবহার শুরু করেছিল বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানের বৈধতা ও প্রাতিষ্ঠানিক অস্তিত্ব না থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পাবে না মর্মে বুঝতে পেরে প্রতারণার আশ্রয় নেয়।

চক্রটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রশাসন শাখা-১ অধিশাখার ১৯ জুলাই তারিখের স্বারক সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে। এছাড়া তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষর-সীল জালিয়াতি করে নিজেরাই বুথ স্থাপন, স্যাম্পল কালেকশন, লোক নিয়োগ এবং ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি নিয়ে নেয়।

এই ভুয়া অনুমতিপত্রের মাধ্যমে প্রতারক চক্রটি ঢাকা এবং ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর এবং ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে বিভিন্ন জনকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত কোনো রকম সনদ এবং অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও শুধু প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়।

আব্দুল্লাহ আল আমিন এবং আবু হাসান তুমার প্রাথমিকভাবে কোম্পানির প্রোফাইল বানানোর জন্য খরচ করে এক হাজার টাকা, বিভিন্ন লোগো সম্মলিত আবেদনপত্র প্রিন্ট করার জন্য খরচ করে এক হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার জন্য ২০০ টাকাসহ মোট আড়াই হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সমগ্র বাংলাদেশে ১০০টি ক্যাম্পাস স্থাপন করে। প্রতিটি ক্যাম্পাসের ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য তারা কমপক্ষে দুই লাখ টাকা করে মোট দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছিল।

একই সঙ্গে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন ছাত্র ও যুবককে ১০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের নামে আরও কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল।

যুগ্ম কমিশনার হারুন বলেন, ‘ইতিপূর্বেও প্রতারক সাবরিনা ও সাহেদদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সুতরাং আমরা জানাতে চাই, কেউ প্রতারিত হবেন না। কোথাও টাকা দেওয়ার আগে যাচাই করুন। ’

এক প্রশ্নের জবাবে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইজিপি’র স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যারাই এই কোভিড পরিস্থিতিকে অপব্যবহার করে জাল-জালিয়াতি প্রতারণার চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১ 
এসজেএ/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।