ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নৌকায় এসে ১৯ স্বর্ণের দোকানে লুট করে শতাধিক অস্ত্রধারী

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১
নৌকায় এসে ১৯ স্বর্ণের দোকানে লুট করে শতাধিক অস্ত্রধারী

সাভার (ঢাকা): গভীর রাতে বংশী নদীর তীরবর্তী এলাকা আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে নৌকায় করে এসে অস্ত্র ঠেকিয়ে ১৯টি স্বর্ণের দোকানে লুট করেছে শতাধিক অস্ত্রধারী। ডাকাতি শেষে নৌকায় করেই পালিয়ে যায় তারা।

এতে প্রায় কোটি টাকার স্বর্ণলঙ্কার লুট হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের।  

রোববার (০৫ সেপ্টেম্বর) দিনগত গভীর রাতে আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।  

ডাকাতি হওয়া দোকানগুলো হলো-ভূমি জুয়েলার্স অ্যান্ড ওয়ার্কশপ, আরিফা গোল্ড পালিশ হাউজ, জবা জুয়েলার্স, অন্তু জুয়েলার্স, সৌরভ জুয়েলার্স, সাথী জুয়েলার্স, যমুনা জুয়েলার্স, মতি জুয়েলারি ওয়ার্কশপ, পার্থ জুয়েলারি ওয়ার্কশপ, তুহিন জুয়েলারি ওয়ার্কশপ, সুস্মিতা জুয়েলার্স, মাহফুজা জুয়েলারি ওয়ার্কশপ, দীলিপ স্বর্ণালয়, মনিকা জুয়েলার্স ও আরও কয়েকটি স্বর্ণের দোকান এবং একটি মুদি দোকান৷

স্বর্ণের দোকানদাররা জানান, রাতে তাদের কাছে বাজার থেকে ফোন করে জানানো হয় যে বাজারে ডাকাত পড়েছে৷ অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাকাতরা সব দোকানের মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়। আমরা গিয়ে দেখি আমাদের দোকানের সাটার খোলা, ভল্ট বাইরে রাখা। আর দোকানের ভেতরে সব কিছু উলট-পালট করা৷ আমার দোকানসহ ১৯টি দোকানে লুট হয়েছে। সব মিলিয়ে ডাকাতরা কোটি টাকার মালপত্র লুট করে নিয়েছে। এসময় বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন আহতও হয়েছেন৷ তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷

বাজারের দোকানদারদের অভিযোগ, বাজার কমিটির গাফলতির কারণে ও নিরাপত্তার অভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে৷

দীলিপ জুয়েলার্সের মালিক দীলিপ চন্দ্র দাশ প্রায় ১০ বছর ধরে নয়ারহাট বাজারে স্বর্ণের ব্যবসা করেছেন। তার দোকানেও গত রাতে ডাকাতি হয়েছে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি ভোর ৪টার দিকে আমার পাশের দোকান থেকে ফোন পাই৷ তখন শুনি বাজারে অনেক মানুষ। সবাই হাতে দেশি অস্ত্র, পিস্তল, লাঠি ও শাবল নিয়ে তারা ঘোরাঘুরি করছেন। এরপরে শুনি আমার দোকানসহ আরও কয়েকটা দোকানের তালা ভেঙে সব কিছু নিয়ে গেছে ডাকাতরা৷

আরেক স্বর্ণের দোকানদার জীবন ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, নৌকায় করে ডাকাত দল এসেছিল। আধাঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে তারা সব লুট করে নিয়ে যায়। বাজারের পশ্চিম পাশে নদীতে নৌকা বেঁধে রেখে ডাকাতি করেছে বলে জানতে পেরেছি।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, রাত ১টার দিকে শতাধিক সদস্যের একদল ডাকাত শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে আসে। বাজারে ঢুকে তারা আমাকে মারধর করে। চোখ বেঁধে আমাকেও বেঁধে রাখে। এরপর তারা প্রায় দুই ঘণ্টা ছিল৷ ডাকাতরা সব স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে৷ আমাদের চারজন সিকিউরিটি গার্ডকে মারধর করে বেঁধে রাখে৷

নয়ারহাট জুয়েলারি মালিক সমিতির সভাপতি আশেতুস স্বর্ণকার বাংলানিউজকে বলেন, গত ১০০ বছরেও এমন ঘটনা ঘটেনি। ডাকাতির সময় ডাকাতরা নিরাপত্তা কর্মী আর দোকানগুলোতে থাকা কারিগরদের মারধর করেছে, অনেককে বেঁধে রেখেছে। আমাদের অনেক কারিগর আহত হয়েছেন, যাদের আটকে রাখা হয়েছিল। বাজারের কমিটি রয়েছে, ব্যবসায়ীরা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রাশিদ ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ জানান, গভীর রাতে একদল ডাকাত বংশী নদীতে নৌকায় করে নয়ারহাট এলাকায় আসে। এরপর তারা নদী তীরবর্তী এলাকার প্রায় ১৮-১৯টি স্বর্ণের দোকানে হানা দেয়। এসময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ও বেঁধে রেখে দোকানগুলোতে থাকা স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ সরদার ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজাহারুল ইসলাম।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ সরদার বলেন, আনুমানিক রাত ১টার দিকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আমরা সকালে খবর পেয়েছি। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসি। আমরা তদন্ত করছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২১
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।