সিরাজগঞ্জ: চতুর্দিকে অথৈ বানের পানি। নিমজ্জিত আশপাশের বাড়িঘর ও আবাদি জমি।
সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রানীগ্রাম মহল্লায় শহীদুল ইসলাম নামে এক মুদি দোকানির বাড়ি এটি। বন্যায় সমস্ত এলাকা তলিয়ে গেলেও ভাসতে থাকে তার বাড়ি।
সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন গেলে আট শতাংশ জমির ওপর নির্মিত এ বাড়িটিকে সম্পূর্ণ ভাসতে দেখা যায়। বাড়িটিতে ছয়টি কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনের ঘর ছাড়াও বাথরুম ও রান্নাঘর রয়েছে। বাড়ির পুরো উঠোনে কংক্রিটের ঢালাই।
বাড়ির মালিক মুদি দোকানদার শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর বন্যার কারণে বছরের তিন/চার মাসই আমাদের পানির মধ্যে থাকতে হয়। ক্ষেত-খামার থেকে শুরু করে বাড়ির উঠোন, সব কিছুই বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যায়। কোনো কোনো বছর পুরো ঘরই বন্যার পানিতে ডুবে থাকতো। আমরা ওয়াপদার ঢালে আশ্রয় নিতাম। বন্যা এলে আমাদের দুর্ভোগের সীমা থাকতো না। দু’বছর আগে স্থানীয় সার্প এনজিওর মাধ্যমে বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়াররা এসে বাড়িটি নির্মাণ করে দেন। এতে আমাদের কষ্ট লাঘব হয়েছে।
শহিদুলের স্ত্রী আছিয়া খাতুন জানান, প্রতিবছর বন্যা এলে সবাই ওয়াপদায় উঠলেও আমাদের আর বাড়ি ছেড়ে যেতে হয় না। বৃষ্টি হলেও বাড়ির উঠোনে কোনো কাদা হয় না, পানি জমে থাকে না।
শহীদুল ইসলামের ছেলে কলেজ পড়ুয়া সুজন ইসলাম বলেন, পুরো আট শতাংশ জমির ওপর খোয়া ছড়িয়ে তার ওপর ককশিট জাতীয় কোনো কিছু বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর উঠোনসহ পুরো বাড়ি ঢালাই করার পর টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বাথরুমের চতুর্দিকে শক্ত কাঠ ও ভেতরে প্রায় ৪০ মণ নারিকেলের খোসা ছড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া একটি পদার্থ দেওয়া আছে, যার দ্বারা বাথরুমের বর্জ্যসহ বাড়ির সব আবর্জনা পানি হয়ে বের হয়। ওইসব পানি বের হওয়ার জন্য চারটি পাইপ স্থাপন করা হয়েছে।
সুজন বলেন, ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ মতো শ্রমিক ও আমরা নিজেরা ওই ঘরটি নির্মাণে কাজ করেছি। ৫০ বছরের নিশ্চয়তা দিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা বলেছেন, ঝড় বা বৃষ্টিতে এ বাড়ির কোনো ক্ষতি হবে না।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হোসেন আলী বলেন, প্রতি বছর বন্যায় ওই এলাকার বাড়িগুলোর চাল ছুঁই ছুঁই পানি হলেও এ বাড়িটি ভাসতে থাকে। বাড়ির লোকজন দিব্যি বাড়িতেই থাকেন।
স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা সোসিও হেলথ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামের (শার্প) পরিচালক শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশের বুয়েটের প্রকৌশলীরা বন্যা কবলিত এলাকায় পরীক্ষামূলক এ বাড়িটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করি। নেদারল্যান্ডের প্রকৌশলীরা নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেন।
পরীক্ষামূলক এ বাড়িটি নির্মাণে সফল হলেও এটির ব্যয় খুব বেশি। বিদেশ থেকে বেশ কিছু মেটেরিয়ালস আনতে হয় বলে ব্যয়টা বেশি। যমুনা বিধৌত চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষগুলো এত টাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন না। তবে যদি বাংলাদেশে ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করা যায়, তাহলে খরচ অনেক কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১
এসআই