ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

২২ বছরেও সেতুটিতে পড়েনি কারো পদচিহ্ন 

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১
২২ বছরেও সেতুটিতে পড়েনি কারো পদচিহ্ন 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: দীর্ঘ ২২ বছর আগে সেতু নির্মাণ করা হলেও একদিনের জন্যও কেউ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারেননি। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল।

 

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়ার বনগজ ও কৃষ্ণনগর সড়কের নয়াখালের ওপর নির্মিত সেতুটি ইট বোঝাই নৌকার ধাক্কায় ভেঙে পড়ে। ব্যবহারের আগেই সেতুটি ভেঙে পড়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছি।  

এ দিকে গ্রামবাসীর অভিযোগ, সেতুটির দুই পাড়ের হাঁটার যে সড়ক রয়েছে, তা দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। সড়কের পাশে খাল থাকায় কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করছে। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে আশপাশের বাড়িঘর ও ফসলি জমি।  

দ্রুত সড়ক ও সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী।  

আখাউড়া উপজেলা এলজিইডির অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে এলজিইডি'র অধীনে হাওর বেষ্টিত বনগজ ও কৃষ্ণনগর গ্রামের মধ্যবর্তী নয়াখালের ওপর প্রায় ৫২ ফুট লম্বা এ সেতুটি নির্মাণ করা হয় ছয় লাখ টাকায়।  

সরেজমিন দেখা যায়, উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি সেতুটির দুই গোঁড়ায় মাটি নেই। সমতল থেকে অন্তত ১০/১২ ফুট উঁচু। ফলে মানুষের পদচিহ্ন সেতুর ওপরে আর পড়েনি। সড়ক না থাকায় এভাবে অবহেলায় পড়েছিল প্রায় দুই যুগের মত। সেতুটি থেকে ইট, বালু ও কংক্রিট ধসে রড বের হয়ে গেছে। দেখলে মনে হবে সেতুটি কঙ্কাল হয়ে আছে।

বনগজ গ্রামের বাসিন্দা আবু হানিফ ও ছালেক মিয়া বাংলানিউজকে আক্ষেপ করে বলেন, সড়ক না থাকলে সেতু করে লাভ কী? সম্পূর্ণ টাকাই জলে গেছে। আমাদের দুই ইউনিয়নে সাত/আটটি গ্রাম রয়েছে। প্রায় ৩০/৩৫ হাজার লোকের বসবাস। যদি সেতু ও সড়ক হয়, তাহলে গ্রামের লোকজন অনেক উপকৃত হবে। আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে যাতায়াতে সুবিধা হবে।

একই গ্রামের গৃহবধূ কোহিনুর বেগম বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক না থাকায় আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। প্রায়ই অন্তঃসত্ত্বাদের প্রসব বেদনা উঠলে মাটির রাস্তা দিয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।  

কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম ও আক্কাস মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি কাজের জন্য আমাদের গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে গেলে, পানি ভেঙে যেতে হয়। সেতুটি তৈরি করেছে ২২ বছর হইছে। অথচ একটা পাও ফেলাই নাই। সরকারে কাছে আমাদের দাবি, আমরা সেতু ও সড়ক দুইটাই চাই।  

জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুন নূর বাংলানিউজকে বলেন, যদি মাত্র ২২ বছরে কোনো সেতু ভেঙে যায়, তাহলে অবশ্যাই কাজে অনিয়ম হয়েছে। তাই আমি সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে দাবি জানাই, এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।  

এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জিপিসি-৪ এর অধীনে সড়কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এখানকার জনদুর্ভোগ কমবে।  

কেন এত বছরে সংযোগ সড়ক হয়নি এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আখাউড়া উপজেলা উপ-সহাকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা পৌনে চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করেছিলাম। হাওর বেষ্টিত এলাকা হওয়ায় সড়কটি বিলীন হয়ে যায়। এ জায়গায় যে সেতু ছিল, তা আমাদের জানা ছিল না। নতুন করে শিগগিরই খালের দু'পাড়ের সড়ক সংস্কার করা হবে।  সরকারিভাবে বরাদ্দ এলে সেতুটিও সংস্কার করা হবে নতুন করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।