ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

এবার এক জোড়া হরিণ কেনা যাবে লাখ টাকায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১
এবার এক জোড়া হরিণ কেনা যাবে লাখ টাকায় প্রতীকী ছবি

ঢাকা: চিড়িয়াখানার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত হরিণ শাবক বিক্রি করছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রতিটি হরিণ শাবকের দাম ৭০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা পুনরায় নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (প্রাণিসম্পদ-২) থেকে হরিণের দাম পুনরায় নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রতিটি হরিণ শাবকের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭০ হাজার টাকা। তবে এই মূল্য আরও কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তার পরিপ্রেক্ষিতেই হরিণ শাবকের দাম পুনরায় নির্ধারণ করা হলো।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় চিড়িয়াখানার উদ্বৃত্ত প্রতিটি চিত্রা হরিণের বিক্রয় মূল্য ৭০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা পুনরায় নির্ধারণে সম্মতি প্রদান করা হলো।

এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, আজ থেকে হরিণের মূল্য ৭০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। আমরা ইতিমধ্যে ৫৫টি হরিণ বিক্রি করেছি। আজ থেকে নতুন দামে হরিণ বিক্রি করব।

জানা গেছে, দীর্ঘসময় চিড়িয়াখানা ও এর আশেপাশের এলাকায় মানুষের কোলাহল না থাকায় নিরিবিলি পরিবেশে প্রাণীরা নির্বিঘ্নে সঙ্গীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। দর্শনার্থীরা না আসায় এই প্রাণীদের কেউ উত্ত্যক্ত করছে না। প্রাণীগুলো ফুরফুরে মেজাজে আছে। এ কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সব প্রাণীর যৌন আকাঙ্ক্ষা ও প্রজনন ক্ষমতা বেড়ে গেছে।

এমন উপযুক্ত পরিবেশে চলতি বছরে ইমো পাখি বাচ্চা দিয়েছে ২২টির মতো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরল প্রাণী ইম্পালা দুটি বাচ্চা দিয়েছে। জলহস্তীর ধারণ ক্ষমতা আটটা থাকলেও সেগুলো বংশবৃদ্ধি করে ১৪টিতে দাঁড়িয়েছে। জেব্রার ধারণ ক্ষমতা চারটা হলেও এখন সেটি বেড়ে হয়েছে সাতটি। বানরের সংখ্যাও প্রচুর বেড়েছে।  

এছাড়া চিড়িয়াখানায় হরিণের জন্য বরাদ্দ যে তিনটি শেড রয়েছে, সেখানে সর্বসাকুল্যে ১৭০টি হরিণ অবাধে বিচরণ করতে পারে। কিন্তু লকডাউনের এই ছুটির মধ্যেই হরিণের সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি সপ্তাহে তিন-চারটি হরিণের বাচ্চা হচ্ছে।

অন্যদিকে, ময়ূরের ধারণক্ষমতা ৮০টি হলেও খাঁচায় রয়েছে ৬০টি পূর্ণবয়স্ক ময়ূর। গত আট মাসে ডিম ফুটিয়ে ১৩০টি বাচ্চা ফোটানো হয়েছে, যার প্রত্যেকটি সুস্থ আছে।

এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে চিড়িয়াখানায় প্রাণীরা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাচ্চা প্রসব করায় এসব প্রাণী কমিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র হরিণ ও ময়ূর এই দুটি প্রাণী বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। কারণ এই দুটির লালনপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ অপেক্ষাকৃত সহজ। বাকি প্রাণীগুলো দেশ বা দেশের বাইরের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় অন্য প্রাণীদের সঙ্গে বিনিময় করার অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু এগুলো বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।

চিড়িয়াখানার সূত্র জানায়, বিক্রির জন্য আগে প্রতি জোড়া হরিণের দাম ধরা হয়েছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং প্রতি জোড়া ময়ূরের দাম ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আগ্রহীদের এসব প্রাণী নারী-পুরুষ জোড়া ধরেই কিনতে হবে। একটি কেনা যাবে না।  

হরিণগুলোর নিয়মিত প্রজনন হওয়ায়, এখন প্রতি মাসে অন্তত ২০টি করে হরিণ শাবক বিক্রি করা সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫১টি চিত্রা হরিণ বিক্রি করা হয়েছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ চাইছে, আরও কিছু হরিণ দ্রুত বিক্রি করতে। এসব প্রাণী কিনতে আগ্রহীদের বেশিরভাগ ধনাঢ্য সৌখিন ব্যক্তি।  

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, বন্য প্রাণী পালতে গেলে বন বিভাগের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। মূলত যাদের কাছে সেই অনুমোদনপত্র বা নো অবজেকশান সার্টিফিকেট থাকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র তাদের কাছেই প্রাণীগুলো বিক্রি করতে পারে।  

সাধারণত যারা এসব প্রাণী লালন-পালনে সক্ষম, প্রাণীগুলোর দেখভাল করতে পর্যাপ্ত জায়গা ও আর্থিক সঙ্গতি আছে তাদেরকেই এসব প্রাণী লালন-পালনের অনুমোদন দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, দুটি হরিণ রাখার জন্য অন্তত ১০ শতক ফাঁকা জায়গা থাকতে হয়।

এই প্রাণীগুলো শুধুমাত্র লালন-পালনের জন্য দেওয়া হবে। এ ধরনের প্রাণী কোনো অবস্থাতেই পাচার, শিকার বা খাওয়া যাবে না। হরিণ কেনার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বন অধিদপ্তরের পরিদর্শক দল সরেজমিন যাচাই করে দেখে যে, যিনি কিনবেন, তার সেগুলো লালন-পালন করার সামর্থ্য আছে কি না। প্রাণীগুলো বেড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশ, পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া ও পরিচর্যার সুব্যবস্থা এবং রোগবালাই থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার মতো জ্ঞান আছে নিশ্চিত হলেই তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ২১টি চিত্রা হরিণ, ২০১৭ সালে দুটি, ২০১৮ সালে ১২টি, ২০১৯ সালে চারটি, ২০২০ সালে আটটি হরিণ বিক্রি করা হয়েছিল। সেখানে গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৫৫টি হরিণ বিক্রি করা হয়েছে, যা আগের পাঁচ বছরের হরিণ বিক্রির সমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২১
জিসিজি/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।