ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ, লাভবান চাষি

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১
বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ, লাভবান চাষি

বান্দরবান: বান্দরবানে জুমের পাশাপাশি পাহাড়ের গায়ে মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। চলতি বছর মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হওয়ায় খুবই খুশি তারা।

 

পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ম্রো (মুরুং) সম্প্রদায়ের জনগণের জীবনধারণের প্রধান উৎস জুম চাষ। কঠোর পরিশ্রমী ম্রো চাষিরা বর্তমানে জুমের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলদ বাগান করেও স্বচ্ছল হচ্ছেন। তবে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বান্দরবানে ব্যাপকহারে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন তারা।

বান্দরবান সদরের এম্পুপাড়া, টংকাবতী, চিম্বুক, ওয়াইজংশন, বসন্তপাড়া, ব্রিকফিল্ড এলাকা ছাড়াও রুমা ও থানচি উপজেলায় এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার, আর বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে অনেক চাষি।

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের মিষ্টি কুমড়া চাষি  অপং ম্রো বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর দুই শতাংশ জমিতে চাষ করা মিষ্টি কুমড়া বিক্রির জন্য তুলতে শুরু করেছি। দাম ভালো, তাই বিক্রি শুরু করে দিলাম।  

তিনি আরো বলেন, গত বছর লকডাউনে বিক্রি কম ছিল, অনেক লোকসান হয়েছিল এজন্য। তবে এবার যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকায় গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন দুর্গম পাড়ায় এসে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করছেন পাইকাররা। ফলে বিক্রি বেড়েছে মিষ্টি কুমড়ার।

বান্দরবানের টংকাবতী এলাকার চাষি ইয়ং ম্রো বাংলানিউজকে বলেন, আমরা পাহাড়ে জুমের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া চাষ করি, এটা প্রতিবছরই আমরা করে থাকি। মিষ্টি কুমড়ার ফলন বাড়লে আমাদের বিক্রি করে অনেক লাভ হয়। আমরা কুমড়া বিক্রির টাকা দিয়ে পরিবারের খরচ অনেকটা মেটে।
 

গত বছর লকডাউনে বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে ন্যায্য দাম না পেলেও এবার মনপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন চাষিরা। পাইকারি বিক্রেতারা ও বান্দরবানের এ সুস্বাদু এবং সুমিষ্ট মিষ্টি কুমড়া পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে সরবরাহ করছেন দেশের নানা প্রান্তে।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট থেকে বান্দরবানে আসা পাইকারি মিষ্টি কুমড়া বিক্রেতা মো. হাফেজ বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ে উৎপাদিত বেশিরভাগ ফল আমরা বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করে ট্রাকে নিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করি।  

পাইকারি মিষ্টি কুমড়া বিক্রেতা মো. হাফেজ বাংলানিউজকে আরো বলেন, বান্দরবানের মিষ্টি কুমড়ার স্বাদ ও সাইজ খুব ভালো, তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চাহিদাও ব্যাপক। আমরা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বান্দরবানের বিভিন্ন পাড়া থেকে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। প্রতিবছর এ সময়টা আমরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ ও বিক্রি করার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিই।


বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪২ হেক্টর জমিতে ৪১৫৪ মেট্রিকটন মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন হয় আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১২ মেট্রিকটন।  

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পাহাড়ের মাটি আর আবহাওয়া মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযোগী, তাই দিন দিন পার্বত্য জেলা বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বাড়ছে এবং কৃষি বিভাগ এ আবাদে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, বান্দরবানের মিষ্টি কুমড়া দিন দিন বিভিন্নস্থানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অনেক কষ্ট করে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেন, যা খেতে খুবই সুস্বাদু।  

তিনি বাংলানিউজকে আরো জানান, বান্দরবানের মিষ্টি কুমড়া বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ হচ্ছে এবং এতে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ী উভয়পক্ষই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

মিষ্টি কুমড়ার আবাদ ও বিক্রি করে বেশিরভাগ সময় পরিচর্যায় পাহাড়ে ব্যস্ত থাকেন চাষিরা। আর কৃষি বিভাগ থেকে সহায়তা অব্যাহত থাকলে পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়ার ফলন ও বিক্রি আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা চাষিদের।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১  ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।