রংপুর: রংপুরে নিরাপদ পানির জন্য বসানো গভীর নলকূপ থেকে বের হচ্ছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার উষ্ণপানি। পানি উত্তোলন করতে গেলেই গরমে ফেটে যাচ্ছে পাইপ।
এদিকে উত্তোলিত পানি পরীক্ষার পর তাতে কিছুটা গন্ধ মিললেও তা পানের উপযোগী বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিভাগের রসায়নবিদ।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ওই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম বাবুর বাড়িতে ৫৪৫ ফুট গভীর একটি সাব-মার্সিবল পানির লাইন স্থাপন করে সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের কর্মীরা। ওই নলকূপ থেকে প্রথম দিকে ঠাণ্ডা পানি ওঠলেও কিছুদিন পরই গরম পানি বের হওয়া শুরু হয়। এ অবস্থায় গরম পানি থেকে রেহাই পেতে আরও দুটি নলকূপ বসানো হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। শুধু ওই বাড়িতে নয়, আশপাশের বেশ কিছু বাড়ির অগভীর নলকূপ থেকেও গরম পানি বের হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, এই গ্রামের পানির স্বাদ অন্য এলাকার পানির মতো লাগে না। সাবানের পানির মতো অনেকটা পিচ্ছিল এবং গন্ধটাও অন্য রকম।
আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম বাবু বলেন, ‘মন্ডলপাড়ার প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে এ সমস্যা। ২৫ ফুটের বেশি গভীর হলেই নলকূপ বা পানির পাম্প থেকে গরম পানি বের হতে থাকে। ঠাণ্ডা পানি পাওয়ার আশায় উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ে ধর্না দিয়ে ৫৪৫ ফুট গভীর সাব-মার্সিবল পানির লাইন বসিয়েছি। তবু ঠাণ্ডা পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বরং এই গভীর নলকূপ থেকে আরও বেশি গরম পানি বের হচ্ছে। ’
স্থানীয় মুকুল, বদি ও আনজুয়ারা বলেন, একটি বা দুটি নয়, মন্ডলপাড়ার প্রায় ১২/১৩টির বেশি নলকূপ থেকে দীর্ঘদিন ধরে গরম পানি ওঠছে। ‘শফিউল আলমের বাড়ির গভীর পানির লাইন থেকে বের হওয়া পানি প্রথম এক মিনিট হাতে ছোঁয়া যায়। এরপরই ফুটন্ত গরম পানির মতো বের হতে থাকে। হাতে বা শরীরে লাগালে অনেক সময় ফোসকা পড়ে যায়। ’
এদিকে বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, রসায়নবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা ওই নলকূপের পানির নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেন। এতে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলেও পানিতে আয়রনের সহনীয় মাত্রা পাওয়া যায়। তবে পানিতে কিছুটা গন্ধ থাকলেও তা খাবার উপযোগী।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তা সরকার সাব্বির আহমেদ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনা অপ্রত্যাশিত। গভীর নলকূপ ও আশেপাশের নলকূপ থেকে গরম পানি বের হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। গরম ও গন্ধ থাকলেও পানি খাবার উপযোগী রয়েছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রংপুর পানি পরীক্ষাগারের রসায়নবিদ (কেমিস্ট) আব্দুল জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পানি পরীক্ষা করে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পেয়েছি। তবে কেন, কীভাবে এটি হলো তা বলা মুশকিল। জিওলজিক্যাল কোনো কারণে এটি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হাইড্রোলিওজিস্ট অথবা মাইনিং স্পেশালিষ্ট কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করালে কারণ বের হতে পারে। আমরা উপর মহলে কথা বলে সে চেষ্টা করছি।
রংপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ কুমার সাহা বলেন, রংপুরে এটি নতুন সমস্যা। জিওলজিক্যাল সমস্যার কারণে এটি হতে পারে। আমরা বিষয়টি গ্রাউন্ড ওয়াটার সার্কেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
এমএমজেড