ঢাকা, শনিবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কালিয়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একাধিক গ্রাম!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
কালিয়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একাধিক গ্রাম! কালিয়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একাধিক গ্রাম!

নড়াইল: নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় মধুমতি ও নবগঙ্গা নদীর গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে কয়েকটি গ্রামের নাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চলতি বছরে নবগঙ্গা ও মধুমতি নদীর বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙনে প্রায় ৩ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে।

গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষ। হুমকির মুখে পড়েছে কালিয়া পৌর শহরও।

বর্তমানে ভাঙন পাড়ের প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর যেকোনো সময় নদীগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর মানুষের রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।  

বাড়িঘর হারিয়ে মানুষগুলো আশপাশের গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কালিয়া পৌরশহরের বড় কালিয়া, বৃহাসলা, ও কুলসুর এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চলতি বছরের ভাঙনে বড় কালিয়ার সুমন সরদার, রাসেল সরদার, রহিম শেখ, রিয়াজ শেখ, আব্দুল গফ্ফার, ছোট মনিও আবু সুফিয়ানসহ ২৫টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা আরও অন্তত পাঁচটি পরিবারের মানুষ রাতের ঘুম হারাম করে সেখানে বসবাস করছেন।

নদী ভাঙনে বৃহাচলা গ্রামের প্রায় ৩৫টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ক্ষতি কমাতে ঘরবাড়ি সরিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন অনেকেই।
কালিয়া পৌরসভার অপর একটি জনপদের নাম কুলসুর। এক সময় এখানকার মৃৎশিল্পের খ্যাতি ছিল সারাদেশে। নবগঙ্গা নদীর অব্যাহত ভাঙনে মৃতশিল্পের কারিগর পাল গোত্র রয়েছে মারাত্মক সংকটে। গত কয়েকে বছরে গ্রামটির এক তৃতীয়াংশ জমিসহ প্রায় ২৫টি বাড়ি, গাছপালা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। চলতি বছর ওই নদীর ভাঙনে চারটি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও তিনটি বাড়ি।
একই নদীর তীরবর্তী একটি গ্রামের নাম দেবীপুর। গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটির প্রায় তিন চতুর্থাংশই গিলে ফেলেছে নবগঙ্গা। চলতি বছরের ভাঙনে ওই গ্রামে প্রায় ১৩৫টি বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। তার পাশেই গ্রাম বাহিডাঙ্গা। এ গ্রামের রয়েছে ভাঙনের ভয়াবহতা। ইতোমধ্যেই নদী ভাঙনে গৃহহারা হয়ে পড়েছেন গ্রামটির প্রায় ৪০টি পরিবার। গৃহহারা মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

উপজেলায় মৃৎশিল্পীদের আর একটি জনপদের নাম শুক্তগ্রাম। গত কয়েক বছরের ভয়াবহ ভাঙনে গ্রামটির দুই তৃতীয়াংশ নবগঙ্গার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। চলতি বছরের ভাঙনে গ্রামটির প্রায় অর্ধশত বাড়িঘর ও সরকারি স্থাপনাসহ বাজারের দোকান-পাট নগীগর্ভে নিমজ্জিত হয়েছে। নদীর পানি কমার সঙ্গেই ভাঙনের তীব্রতাও শুরু হয়েছে। বাজারের কয়েকটি দোকানও ভাঙনপাড়ে দাঁড়িয়ে নদীতে বিলীন হওয়ার প্রহর গুণছে।  

সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানায়, ভাঙন রোধ করা না গেলে দ্রুতই বাজারটিও বিলীন হয়ে যাবে। উপজেলা মানচিত্র থেকে গ্রামটির নামও মুছে যেতে চলেছে বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
একইভাবে মধুমতি নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে কালিয়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্পীদের আর একটি আবাসস্থল ঘষিবাড়িয়া গ্রাম। ওই সময়ে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে চলে গেছে। চলতি বছরও গ্রামটির মিঠু পাল ও সুমিত্রা পালের বাড়িসহ চারটি বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে।

এছাড়া মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙনে উপজেলার চরমধুপুর গ্রামের একটি অংশ এরইমধ্যেই নদীতে নিমজ্জিত হয়েছে। গত দুই বছরের ভাঙনে গ্রামটির প্রায় ১৫টি বাড়ি ভাঙনে বিলীন হয়েছে।
কালিয়া পৌরসভার মেয়র মো. ওয়াহিদুজ্জামান হীরা বাংলানিউজকে বলেছে, পৌরসভা শহরের বড়কালিয়া, বৃহাচলা ও কুলসুরে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে। এছাড়া বেন্দা ও উথলীসহ কয়েকটি স্থানে ভাঙন লেগেই আছে। চলতি বছরের ভাঙনে পৌর শহরের ৪০-৪৫ টি বাড়ি নদীতে গেছে। গৃহহীন মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। দ্রুত ভাঙন রোধে পদক্ষেপ না নিলে আরও অনেক পরিবার বসতভিটা হারিয়ে গৃহহারা হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কালিয়া পৌরসভার বড়কালিয়া, বৃহাচলা ও কুলসুর, সালামাবাদ ইউনিয়নের বাহিরডাঙ্গা, ও দেবীপুর, বাবরা হাচলা ইউনিয়নের শুক্তগ্রাম ও মাউলী ইউনিয়নের ঘষিবাড়িয়ায় নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নবগঙ্গা ও মধুমতির ভাঙনে এবছর উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নড়াইল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

নড়াইল জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি তিনি পাউবো নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী, কালিয়ার ইউএনও, পৌর মেয়রসহ উপজেলার ভাঙন কবলিত কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করে দুই শতাধিক ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছেন এবং ভাঙনকবলিত আট গ্রামের ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। যাতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়:  ০৮৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।