রাজশাহী: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গা আসছেন মর্ত্যলোকে।
আসছে ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে শুরু হবে এ পূজা। করোনা পরিস্থিতির কারণে কীভাবে হবে দুর্গাপূজা সে অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক শ্রদ্ধায় তিলতিল করে গড়ে তোলা দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা কারিগররা। মহামারি করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও দুর্গাপূজার আনন্দ অনেকটা ম্লান হতে চলছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার কমেছে মণ্ডপের সংখ্যা। এবার পূজার সেই পুরোনো সংস্কৃতি অনেকটা লুকিয়ে থাকবে অগোচরে। বাইরে ঘুরতে যাওয়া, পূজার মণ্ডপগুলোতে আলোকসজ্জাসহ নানা ধরনের আয়োজনে বিশেষ চাকচিক্য থাকছে না। মহালয়া থেকে শুরু করে শারদীয় উৎসবের সব ক্ষেত্রেই কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।
সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার মহালয়া হবে ৬ অক্টোবর। ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। পরদিন ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। ১৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী ও ১৪ অক্টোবর মহানবমী পূজা। ১৫ অক্টোবর মহাদশমী বা বিজয়া দশমী হবে। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
পূজা ঘনিয়ে আসায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত রাজশাহীর মৃৎশিল্পীরা। শৈল্পিক শ্রদ্ধায় তৈরি করছেন একেকটি প্রতিমা। শ্রাবণ নামের জগন্নাথ দেবের উৎসবের দিন থেকেই প্রতিমা তৈরিতে হাত দেন কারিগররা।
মনসা পূজার পর মূল প্রতিমায় মাটির প্রলেপের কাজ শুরু করেন। কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ এখন শেষের দিকে। এরপর রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমা পাবে দৃষ্টিনন্দন রূপ। শক্ত মাটি নরম করে দেবী দুর্গার সঙ্গে গড়ে তুলছেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) মহানগরের পালপাড়া ও বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীদের শৈল্পিক ছোঁয়ায় খড়, মাটি, পাট আর কাদায় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। শুধু বাকি রয়েছে পরিপাটি করে সাজানোর কাজটুকু।
মহানগরের মিয়াপাড়ার ধর্মসভা, গণকপাড়ার বৈষ্ণবসভা, ঘোড়ামারা, শেখেরচক, কুমারপাড়া, হরগ্রাম ও মিয়াপাড়া এলাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে।
কেউ খড় দিয়ে প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ করছেন, কেউবা মাটি দিয়ে খড়ের ওপর আবরণ দিচ্ছেন।
সকাল থেকে রাত অবধি চলছে এ কার্যক্রম। পিছিয়ে নেই রাজশাহীর পাল বাড়ির কারিগররাও। যেন দম ফেলার সময় নেই কারো।
কারিগররা বলছেন, এ বছর প্রতিমা তৈরির তেমন অর্ডার নেই। এবার আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন না তারা।
একদিকে উপকরণ মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে ঐতিহ্যগতভাবে এ পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
ঋষি কান্ত পালের ছেলে প্রতিমা শিল্পী কার্তিক চন্দ্র পাল। তিনি প্রায় ১৪ বছর বয়স থেকে এ পেশায় জড়িত। প্রতিবছর তিনি ২০-২৫টি প্রতিমা তৈরির অর্ডার নেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
কার্তিক চন্দ্র পাল বাংলানিউজকে বলেন, অক্টোবর মাসের ১০ তারিখে পঞ্চমী। পঞ্চমীর রাতের আগেই আমাদের প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা এখন খুব ব্যস্ত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে কাজ শুরু করি কাজ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। কাজ করতে গিয়ে আমাদের অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার উপায় থাকে না। খাওয়া-দাওয়ারও কোনো ঠিক নেই।
তিনি আরও বলেন, এক মাস আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত ১৫টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০-১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে ৪-৫ জন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন। প্রতিমা তৈরির জন্য লাগে মাটি, খড়, কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা, ধানের তুষ ও কয়েক ধরনের রং।
সব মিলিয়ে যা খরচ হয় তার চেয়ে খুব একটা লাভ হয় না। এরপরও পৈত্রিক পেশা টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছেন বলেও জানান প্রতিমা শিল্পী কার্তিক পাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
এসএস/আরবি