ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

২৪০০ কবিতা লিখেছেন বালুশ্রমিক গুলজার

এম রবিউল ইসলাম রবি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
২৪০০ কবিতা লিখেছেন বালুশ্রমিক গুলজার গুলজার

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ শহরের পাড়া মহল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে বালু ওঠানো-নামানোর কাজ করে সংসার চালান গুলজার হোসেন গরিব। এলাকার মানুষ তাকে গরিব কবি বলে ডাকে।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে যেটুকু সময় অবসর থাকেন, সে সময়ে করেন লেখালেখি। সুযোগ পেলে আবৃতি করেন কবিতা।

গুলজারের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামে। অভাব অনটনের সংসারে বেশি দূর লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। মহারাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তারপর সংসারের অভাবের কারণে পিতার কৃষিকাজে সহযোগিতা শুরু করেন।

বয়স কিছুটা বাড়লে শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। আইসক্রিম বিক্রি, ভ্যান চালানো, বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে চালাতে থাকেন সংসার। তারপরও সময় পেলেই বই পড়তেন। বই পড়া ছিল তার এক ধরনের নেশা, আর এ আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন সময় লেখেন কবিতা। ২০০১ সালে ‘আহ্বান’ নামে একটি কবিতা দিয়ে কবিতার জগতে হাতেখড়ি তার।

প্রথম কবিতা লেখার পর স্বজন ও বন্ধুদের বাবহা পেয়ে বেড়ে যায় তার উৎসাহ। একে একে লেখেন গভীর রাত, তোমাকে হত্যার পর, গরিবের বিদ্বেষ, প্রিয় সাবির হাকা, এখানে যা নেই, ভাইরাসসহ প্রায় ২ হাজার ৪০০ কবিতা। ১০টি প্রবন্ধও লিখেছেন তিনি। মাঝে মাঝে নিজের কন্ঠে আবৃতিও করেন। লিখেছেন ২১০টি গান।

গুলজার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি বেশি লেখাপড়া করতে পারিনি। পড়াশোনার প্রতি খুবই আগ্রহ ছিল। কিন্তু অভাবের কারণে প্রাইমারির গণ্ডি পার করতে পারিনি। তবুও কবিতা লেখার প্রতি আমার আগ্রহ অনেক। ২০০১ সাল থেকে কবিতা লেখা শুরু করি। এখনও লিখে যাচ্ছি। পরিবারের হাল ধরতে ২০০৫ সালে বালু শ্রমিকের কাজ শুরু করি। আগে দিনে আড়াই’শ থেকে ৩’শ টাকা পেতাম এখন ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা পাই। নিজে স্কুলে যেতে পারিনি। যত কষ্ট হোক না কেন আমার সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ বানাতে চাই। আমার মেয়ে মিতা নূর এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছেলে একরামুল কবির নবম শ্রেণিতে পড়ছে।

গরিব কবি বলেন, বর্তমানে আমি খুবই আর্থিক কষ্টে আছি। ২০১৬ সালে একদিন ট্রাক থেকে বালি নামানোর সময় পিঠের নিচের অংশে ব্যথা অনুভব করি। চিকিৎসক দেখানোর পর তারা জানান আমার কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে পরামর্শ দেন বেলচা চালানোর কাজ আর না করতে। এ অবস্থায় জমানো ও ধার করা এক লাখ টাকা দিয়ে বালুর ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু তেমন একটা লাভ করতে পারেননি, উল্টো এ দীর্ঘ সময় ওষুধ খেয়ে পুঁজি হারিয়ে ফেলেছি। এখন আবার বেলচা হাতে ট্রাকে যাই। তবে প্রায়ই আমাকে কাজ না করে বসে থাকতে হয়। এতে খুবই অর্থ কষ্টে সময় পার করছি। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে সংসার চালানো আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর। সংসারের চিন্তা মাথায় আসলে মাঝে মধ্যে লেখার আগ্রহ কমে যায়।

ঝিনাইদহের কবি ও গবেষক সুমন সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, গুলজারের রয়েছে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ। তিনি পড়েন বিভিন্ন লেখকের বই। তার লেখা কবিতা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে। যেভাবে তিনি লেখালেখি করেন এভাবে করতে থাকলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন তিনি।

ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, গুলজার হোসেন গরিব একজন সংগ্রামী মানুষ। তার কবিতায় বাঙালি ও শ্রমিক শ্রেণির বঞ্চনার কথা থাকে। শুধু তাই না সে নিজে শ্রমিক হলেও শ্রমিক শ্রেণির মানুষের উপকারে কাজ করেন। পৌরসভা, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে বালু শ্রমিকদের মাঝে বিতরণও করেন তিনি।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।