ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

করোনায় উদ্বিগ্ন ৮৪ শতাংশ পোশাক শ্রমিক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
করোনায় উদ্বিগ্ন ৮৪ শতাংশ পোশাক শ্রমিক

ঢাকা: দেশের তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের ৮৪ শতাংশ জানিয়েছেন তারা চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে করোনা প্রতিরোধে কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৪৭ শতাংশ শ্রমিক।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজ (এমএফও) যৌথভাবে পরিচালিত “গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ” জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

দেশের পোশাক শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ, আয়, ব্যয়, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও মজুরি দেওয়ায় ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠান দুটি।  

চলতি বছরের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম, ঢাকা শহর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারে কর্মরত পোশাক কারখানার এক হাজার ২৭৮ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ফোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশের বেশি উত্তরদাতা নারী শ্রমিক, যা সামগ্রিকভাবে এ শিল্পের বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন। জরিপে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে করোনার কারণে ঘোষিত লকডাউনের প্রভাব এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থা ও আগামীতে মজুরি কম-বাড়ার সম্ভাবনার ব্যাপারে তাদের মনোভাবের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।  

জরিপে ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে শ্রমিকদের উপস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।  

৮৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, আগের সপ্তাহে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। প্রথম সপ্তাহে ৮৯ শতাংশ পুরুষ ও ৮১ শতাংশ নারী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। কাজে উপস্থিত থাকা ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতার মধ্যে ৪৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা লকডাউনের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে অসুবিধা বোধ করেননি। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে কাজে উপস্থিত থাকা পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের কাজের সময় পরার জন্য মাস্ক দেওয়া হয়েছিল।  

তবে কাজের সময় কারখানায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে তুলনামূলক ইতিবাচক চিত্র পাওয়া যায়। কাজে যোগ দেওয়া উত্তরদাতাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা কাজের সময় কারখানায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পেরেছেন।

মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা বাদে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৭ শতাংশ পোশাক শ্রমিক জানান, তাদের কারখানায় করোনা সংক্রমণ রোধে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ৪৭ শতাংশের মধ্যে ৮৩ শতাংশ মনে করেন অতিরিক্ত পদক্ষেপগুলো সংক্রমণ রোধে যথেষ্ট ছিল। যদিও এ জরিপের প্রায় প্রতিটি প্রশ্নের ক্ষেত্রেই নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা একই রকম উত্তর দিয়েছেন, এ প্রশ্নের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ভিন্নমত লক্ষ্য করা যায়।

৮৭ শতাংশ নারী শ্রমিক ও ৭১ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক মনে করেন কারখানায় নেওয়া অতিরিক্ত পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট ছিল।  

আগামীতে কি পরিমাণ মজুরি পাবেন বলে ধারণা করেন জানতে চাইলে ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা প্রায় একই ধরনের মজুরি পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন। ১৯ শতাংশ জানান, তারা এ ব্যাপারে অনিশ্চিত। ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে কম মজুরি পাবেন বলে ধারণা করছেন। ১ শতাংশ উত্তরদাতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মজুরি পাওয়ার প্রত্যাশা করেন, যাদের মধ্যে প্রায় সবাই বেশি ওভারটাইম কাজ করেছেন। যেই ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে কম মজুরি পাবেন বলে ধারণা করছেন, তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ মনে করেন লকডাউন সংক্রান্ত কারণে মজুরি কমবে।  

কম মজুরি দিয়ে কীভাবে সামলাবেন জানতে চাইলে সর্বাধিক ১৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা খাবারের পেছনে ব্যয় কমাবেন। ১৮ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করবেন। ১৬ শতাংশ শ্রমিক অন্যান্য ব্যয় কমাবেন। ১৩ শতাংশ নিজের ঘরের বাইরের পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্ভর করবেন। ১২ শতাংশ পরিবারের বাইরের পরিচিতজনদের ওপর নির্ভর করবেন। ১১ শতাংশ জানান, নিজের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বেশি ব্যয় বহন করবেন। নয় শতাংশ তাদের সঞ্চয় থেকে ব্যয় করবেন। চার শতাংশ নিজ ঘরের পরিবারের অন্যান্য সদস্যের ওপর নির্ভর করবেন। এক শতাংশ জানান, তারা বাড়ি ভাড়া দেরিতে দেবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
এসই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।