ঢাকা, শুক্রবার, ২২ ভাদ্র ১৪৩১, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংসদে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা

স্পেশার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
সংসদে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা

ঢাকা: সংসদ অধিবেশেনে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে আবারও বিরোধী দলের সদস্যরা ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। তারা স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরে এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন।

বুধবার (১৫ সেপ্টেস্বর) সংসদে উপস্থাপিত তিনটি বিলের প্রস্তাবের আলেচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনা করেন।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, চিকিৎসকরা রাজনীতি করেন। বিএনপি করে গিয়েছিল ড্যাব, আওয়ামী লীগ এসে করেছে স্বাচিপ। আইনের মধ্যে যদি আনতেন যে, ডাক্তার ও বিজ্ঞানিরা রাজনীতি করতে পারবেন না, তাহলে খুব খুশি হতাম। কিন্তু সেটা আনা হয়নি। ডাক্তাররা যদি এই দেশে রাজনীতি করেন তাহলে আমরা কী করবো? আমাদের কাজটা কী? ওনারা চলে আসুক রাজনীতি করতে। যারা ভালো ছাত্র তারা ডাক্তারি পড়েন, কিন্তু তারা যদি রাজনীতি করেন তাহলে আমরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছি। মানুষ সেবা পাবে কীভাবে?

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অ্যাডমিন ক্যাডারের লোক, জজ বা পুলিশ ক্যাডারের লোক তো চাকরি করে প্রাইভেট কোনো বিষয়ে কনসালটেন্সি করতে পারেন না। ডাক্তাররা কেন বিসিএস অফিসার হয়ে ডিউটির পর প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন? সে ক্ষেত্রে তার যে মূল কাজ সেটা ঠিক থাকে না। এটা দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা। মন্ত্রীকে বলবো যদি উপকার করতে চান তাহলে ডাক্তার সাহেবদের প্রাইভেট প্যাকটিস দয়া করে বন্ধ করার চেষ্টা করেন। জনগণের পয়সা দিয়ে তাদের বেতন দেবেন, তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন, এটা আমরা করতে পারি না।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, বেসরকারি মেডিক্যাল ও হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক মানুষ নিস্ব হয়ে গেছেন। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেই। টেকনোলজিস্টের ব্যাপক সংকট। ২০২০ সালের পরীক্ষার ফল এখনো দেওয়া হয়নি। সরকারের টাকা খরচ করে মেশিন কেনা হয়, কাজে লাগে না। অনেক মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক এয়ারপোর্টে পিসিআর ল্যাব দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেওয়ার পরও প্রবাসীদের ঘেরাও করতে হয়েছে।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে বেহাল দশা। দেশের পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করেছি। আমরা এখনো পর্যন্ত সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারিনি। যারা আজকে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত তারাই আজকে বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসা করছেন। হাসপাতালের পর্দা কেনা হয় ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে। স্বাস্থ্য খাতের এত অনিয়ম, দুর্নীতির কথা আমরা বলে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো ভালো হয় না। এতগুলো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন, এইগুলো কি মানসম্মত?

বিএনপির আরেক সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, করোনাকালে অর্থনৈতিকভাবে কতগুলো পরিবার পঙ্গু হয়ে গেছে, সেই খবর কি আমাদের কাছে আছে?  করোনাকালে হাতেগোনা কিছু রিপোর্ট এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে—করোনায় সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পড়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। অনেকে হয়তো বেঁচে গেছেন কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। করোনার আগে যেখানে মধ্যবিত্ত ছিল ৭০ শতাংশ সেখানে মধ্যবিত্ত নেমে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। দরিদ্র মানুষ যেখানে ছিল ২০ শতাংশ সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশ। বেসরকারি মেডিক্যালে গিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার ইতিহাস কিন্তু নতুন কিছু নয়। করোনার সময় যে কয়টি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে মানুষকে সর্বস্বান্ত করার অভিযোগ এসেছে তার মধ্যে শীর্ষে আছে সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্যের হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ।

বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, চিকিৎসকরা রাজনীতি করছেন। আমরা রাজনীতি করি রাজনীতিবিদের জায়গায় থাকবো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আইন-শৃঙ্খলার জায়গায় থাকবে। ডাক্তাররা ডাক্তারদের জায়গায় থাকবে। সেই জায়গাগুলোকে রিপেয়ার করা দরকার। বেসরকারি হাসপাতালগুলো টাকা রোজগারের একটি পথ খুলে নিয়েছে, সেখানে মানুষ নিস্ব হয়ে যাচ্ছে। আমরা অনিয়মের কথা বলে যাই কিন্তু লাভ হয় না। আমাদের কথাগুলো শোনা হলে, ব্যবস্থা নেওয়া হলে মানুষ উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেস্বর ১৫, ২০২১
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।