ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা, হতাশ দাম নিয়ে

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা, হতাশ দাম নিয়ে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আকাশ জুড়ে শরতের ভেলা। দিগন্ত জুড়ে কাঁশফুল জানান দিচ্ছেন আসছে শারদীয় দুর্গোৎসব।

আর কয়েক সপ্তাহ পরই সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবছরই জমজমাটভাবে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। তবে করোনার কারণে গতবারের মতো এবারও আনন্দ উৎযাপনে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। পূজা উৎসবে যেমন করোনার প্রভাব পড়েছে তেমনি প্রভাব পড়েছে প্রতিমা কারিগরদের উপর। পূজাকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়লেও মূল্য নিয়ে হতাশা রয়েছে কারিগরদের মধ্যে।  

জেলায় এ বছর প্রায় সাড়ে ৫০০ মত মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা হবে। সে লক্ষ্যে প্রতিমা কারিগরা বিভিন্ন পূজা মণ্ডপসহ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রতিমা তৈরির প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

সরেজমিন জেলা শহরের ভাদুঘর পাল পাড়াতে গিয়ে দেখা যায়, সারিসারিভাবে প্রতিমা দাঁড় করানো আছে। দেবী দুর্গার সঙ্গে রয়েছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী ও স্বরসতী। এখন পর্যন্ত মুখমণ্ডলসহ দেহের অবয়ব গঠন করা হয়েছে। বাড়ির পুরুষের পাশাপাশি নারী কিশোরাও এ কাজে অংশ নিচ্ছে। প্রচণ্ড রোদে এই প্রতিমাগুলো শুকানোর কাজ চলছে। আর কিছুদিনই পরেই রং তুলির আঁচড়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে প্রতিমাগুলো।

এ নিয়ে কথা হয় পাল পাড়ার প্রতিমা কারিগর দুলাল পালের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ৩৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার ৩২টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। সময়মত এসব প্রতিমা মণ্ডপে পৌঁছে দিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। তবে করোনা আগে প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করতে ৪০-৫০ হাজার টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু চলমান পরিস্থিতির কারনে প্রতিমার মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্য বছর প্রতিমার ভাল মূল্য পেলেও এবার তেমন ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে না।  

পাল পাড়ার আরেক কারিগর রবীন্দ্র পাল বাংলানিউজকে বলেন, তেমন বেশি লাভ না হলেও বাপ-দাদা ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। দুর্গা পূজা ছাড়াও বিভিন্ন পূজার প্রতিমা তৈরি করে থাকি। পূজাকে সামনে রেখে আটটি প্রতিমার কাজ পেয়েছি। প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে ২৫-৩০ হাজার টাকা পাব।

কারিগর নিকিল পাল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হাতের তৈরি প্রতিমা কেনার জন্য জেলা ও জেলার বাইরে থেকেও ক্রেতারা ছুটে আসছেন।  

কিশোরগঞ্জ থেকে আসা প্রতিমা তৈরির শ্রমিক লিটন পাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিমা তৈরির জন্য দুই মাস আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছি। প্রতিদিন কাজ করে গড়ে ৫০০ টাকা মুজুরি পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ১৫টি প্রতিমা তৈরির কাজে অংশ নিয়েছি।  

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি সোমেশ রঞ্জন রায় বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় এ বছর প্রায় সাড়ে ৫০০ মণ্ডপে দুর্গোউৎসব অনুষ্ঠিত হবে। তবে করোনা পরিস্থির কারণে প্রতিটি মণ্ডপে যেন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত থাকে সেজন্য পূজা মণ্ডপ কৃর্তপক্ষদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, পূজা মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী নিয়োজিত থাকবে।

পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী দুর্গা আসবেন ঘোটকে করে। আর গমন করবেন দোলায় চড়ে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।