ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কখন যাবেন শাপলার বিলে?

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
কখন যাবেন শাপলার বিলে?

বরিশাল: খাল-বিল আর নদীতে ভরা পানি। কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টির এই সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের প্রকৃতি সেজেছে যেন অপরূপ সাজে।

বিশেষ করে সৌন্দর্য ছড়িয়েছে বরিশালের শাপলার বিল।

ভোরে বিলের পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায়, সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দেয়। কারণ বিলের কালচে পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা। ভাগ্যের জোরে এর মাঝেই দেখা মিলতে পারে সাদা আর বেগুনি শাপলা ফুলের।

তবে লাল শাপলার আধিক্যের কারণে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ও উজিরপুর উপজেলার সাতলার বিস্তৃর্ণ এ বিল এলাকা ‘লাল শাপলার বিল’ নামেই পরিচিত।

প্রতিদিনই পর্যটকদের ভিড়

সরকারি ছুটির দিনসহ সপ্তাহের সাত দিনেই পাখিডাকা ভোর থেকে এ লাল শাপলার বিলে পর্যটকদের ভিড় থাকছে। কেউ আসছেন বন্ধুদের সঙ্গে, আবার কেউ পরিবার কিংবা স্বজনদের নিয়ে। বিলের পানিতে নৌকা ভাসিয়ে আনন্দে মেতে উঠছেন তারা।

এই শাপলার কারণে বর্ষাকাল বিশেষ করে আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবর ও নভেম্বর পর্যন্ত পর্যটকের আনাগোনায় চাঙা থাকে স্থানীয় অর্থনীতি।

কখন যাবেন শাপলার বিলে

স্থানীয় বাসিন্দা ছত্তার জানান, এবার শুরুতে খড়া থাকায় বিলে শাপলা ফুলে দেখা মিলতে দেরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আষাঢ় মাসে গোটা বিল এলাকা পানিতে ভরে থাকে, ভাদ্র মাসের দিকে প্রাকৃতিকভাবে শাপলার লতা-পাতাগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করে। আর শ্রাবণের শেষ দিকে এসে ফুল ফুটতে শুরু করে। আশ্বিনের মাঝামাঝি গিয়ে শাপলা ফুলের আকার যেমন বড় হয়, তেমনি গোটা বিল এলাকা লাল শাপলায় একাকার হয়ে যায়।

বিলের নৌকার মাঝি জব্বার মিয়া জানান, ছুটির দিনে এ বিল এলাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে। আর প্রাকৃতিক কারণে শাপলার বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ভোরেই এখানে থাকতে হবে। কারণ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শাপলা ফুল নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করে। আর সূর্য প্রখর হলে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেয় নিজেকে। যারা এ বিষয়ে জানেন, তারা ভোরেই চলে আসেন।

১৫ দিন পরে গোটা বিল এলাকা লাল শাপলায় ভরে যাবে বলে জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, কিছু দিন পরেই ভোরে কুয়াশার মতো পরতে শুরু করবে। তখন প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সময় পূব আকাশে ছড়িয়ে যাওয়া লাল আভার সঙ্গে শাপলার লাল রং মিলে প্রকৃতি এক অপরূপ রং ধারণ করবে।

সৌন্দর্যে মগ্ধ দর্শনার্থীরা

এমন দৃশ্য দেখতে গত কয়েক বছর ধরে এ বিলে ঘুরতে আসেন মঈনুল হাসান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সূর্যোদয়ের সময় যখন রশ্নিগুলো গোটা পূবের আকাশে ছড়িয়ে পরে, তখন এ বিলের সৌন্দর্যটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দুচোখ দিয়ে না দেখলে যা বলে বোঝানোও সম্ভব নয়।

বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ আদিবা নামের এক কলেজছাত্রী বলেন, কোলাহলমুক্ত এ বিলে নৌকায় ঘুরতে খুব ভালো লেগেছে। এখানে তোলা ছবিগুলোও খুব সুন্দর হয়েছে। মনে হয় বারবার এখানে আসি। বিশুদ্ধ বাতাসের নিঃশ্বাসে ঘুরে বেড়ানোর উত্তম জায়গা এটি। আবার যেকোনো ছবি তোলার জন্যও জায়গাটি সেরা।

আদিবা আরও বলেন, বিলে শুধু যে শাপলা দেখা যায় তেমন নয়, পরিষ্কার পানির নিচে দেখা মিলবে জলজ উদ্ভিদের একাংশ। সেই সঙ্গে বিলের পানিতে জেলেদের মাছ ধরা, বকসহ বিভিন্ন পাখিদের খাবার সংগ্রহ, ছোটাছুটি এবং মৌমাছিদের মধু সংগ্রহের দৃশ্যও চোখে পড়বে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শাপলার বিলে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেকে সেলফি তুলছেন। কেউ শাপলা তুলে আটি বাঁধছেন। আবার নারীদের কেউ শাপলার লতা মাথায় পেঁচিয়ে নিজেকে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম করেন।

এতে শাপলার ক্ষতি হয় না জানিয়ে ফয়জুল হক নামের এক মাঝি জানান, প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া শাপলা যতই তোলা হোক না কেন, এটা যেন ততই বাড়ে। যদিও গড়া দিয়ে মাছ চাষসহ নানা কারণে প্রতিবার বিলের সব অংশে সমানভাবে শাপলা হয় না।

বরিশাল শহর থেকে যেভাবে যাবেন

বরিশাল নগর থেকে সড়কপথে এ শাপলার বিলের দূরত্ব দুদিক থেকে দুরকম। নগরের নথুল্লাবাদ থেকে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট হয়ে শাপলার বিলে যেতে চাইলে ৬১ কিলোমিটার পথ। আর উজিরপুর পৌর শহর ও হারতা হয়ে বিলে যেতে চাইলে ৫১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে।  

খরচ কত?

বরিশালে থেকে বাসযোগে আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট বা উজিরপুরের ধামুরা পৌঁছে থ্রি হুইলার ও মোটরসাইকেলে যাওয়া যাবে বিলেভ। সেখানে যানবাহনভেদে জনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা খরচ হতে পারে।

সড়ক পথে বরিশাল থেকে সরাসরি ব্যক্তিগত বা ভাড়া করা যানবাহনেও যাওয়া যাবে শাপলার বিলে। সেক্ষেত্রে যানবাহনভেদে ৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। এরপর বিলের পানিতে ভেসে শাপলা ফুলের মাঝে ঘুরে বেড়াতে জনপ্রতি ও ঘণ্টা হিসেবে নৌকা পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে নৌকাপ্রতি ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা খরচ হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
এমএস/জেএইচটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।