ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বাগেরহাটে বিসিক শিল্প নগরীর বেহাল দশা

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
বাগেরহাটে বিসিক শিল্প নগরীর বেহাল দশা খানাখন্দে ভরা রাস্তা। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: নানা সমস্যায় জর্জরিত বাগেরহাটের একমাত্র বিসিক শিল্প নগরী। সুপেয় পানির সংকট, খানাখন্দে ভরা রাস্তা, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সংকটের অন্ত নেই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর।

এ অবস্থা চলতে থাকলে বিসিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান করার আগ্রহ হারাবে ব্যবসায়ীরা। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাগেরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ১৯৯৬ সালে শহরের ভৈরব নদের পাশে প্রায় ২১ একর জমির ওপর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নগরী গড়ে তোলে। এই শিল্প নগরীতে ১২৩টি প্লট রয়েছে। যার প্রতিটিই বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন সেবার জন্য রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ উপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বিসিক শিল্প নগরীর প্রধান ফটক।  ছবি: বাংলানিউজ

বছর দশেক আগেও এখানে ৫৭টি শিল্প কারখানা চালু ছিল। কিন্তু ভঙ্গুর অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে বর্তমানে মাত্র ৩৭টি প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে ইজিবাইক সেটিংস, নারকেল তেল, অটো রাইস ও ফ্লোয়ার, সরিষা, ডাল মিল, পুরোনো প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, কোকোনাট ফাইবার মিলস অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানে হাজারও শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন।

বিসিকের একটি কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ফেলী ব্যানার্জী বলেন, বিসিকের রাস্তার অবস্থা বেশি খারাপ। এত খারাপ যে হেঁটেও চলা যায় না। আবার ভাড়া দুইগুণ দিলেও রিকশা চালকরা আসতে চায় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিকশা চালক গোবিন্দ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, আমার যাত্রীদের বেশিরভাগই বিসিকের শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। কিন্তু বিসিকের ভেতরে তো ঢোকার উপায় নেই। রাস্তা এত ভাঙা যে ঢুকলেই রিকশা উল্টে যায়। ইটের খোয়ায় ফুটো হয়ে যায় টায়ার। অনেকের জোরাজুরিতে আসলেও দুই-তিনগুণ ভাড়া নিই।

সড়কের বেহাল দশা।  ছবি: বাংলানিউজ

শওকত আলী ও আজাহের শেখ নামে দুই শ্রমিক বলেন, বিসিকে উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন এলাকায় যায়। এখান থেকে সরকার রাজস্ব পায়। তারপরও কেন অবহেলিত আমরা?

সাহা এন্টারপ্রাইজের অন্যতম অংশীদার অশোক কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, পণ্য সরবরাহ ও কাচামাল সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ভাই ভাই ডাল মিলের মালিক কমল দাস বলেন, বিসিকের মধ্যে প্রত্যেকটি রাস্তার অবস্থা খারাপ। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নিজেদের খরচে মিলের সামনে ইট, বালু ও খোয়া ফেলা হয়েছে, যাতে রাস্তাটা মোটামুটি ঠিক থাকে।

ঝর্ণা বেগম নামে এক নারী শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, বিসিকের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয় আমাদের। কিন্তু এখানে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি কিনে খেতে হয়। এছাড়া রান্না ও গোসলের জন্য বাইরে থেকে পানির ব্যবস্থা করতে হয়। পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

নেই কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা।  ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সভাপতি শিব প্রসাদ ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, বিসিকের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি। কিন্তু কোনো উন্নয়ন হয়নি। এতগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকার পরেও এখানে ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। শুনেছি, এখানে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকায় কি হয়, কি কাজ করে- তা আমরা জানতেও পারি না।

বাগেরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মো. শরিফ সরদার বাংলানিউজকে বলেন, বিসিকে অনেক কাজ রয়েছে। সব কাজ তো একসঙ্গে হবে না। তবে কিছু রাস্তার সংস্কার ও গেট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।