ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

হুমকিতে দেশীয় প্রজাতির মাছ

বিলাঞ্চলে বেড়েছে চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
বিলাঞ্চলে বেড়েছে চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার

বরিশাল: হঠাৎ করেই চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার বেড়েছে বরিশালের বিলাঞ্চলে। বিশেষ করে গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার গ্রামীণ জনপদে এ জালের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে।

এদিকে এই জালের ব্যবহার বাড়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছ বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে মৎস্য বিভাগ। কারণ খুবই ক্ষুদ্র ফাঁসের এ জালে ছোট পোনা থেকে পূর্ণাঙ্গ মাছসহ জলজ সব প্রাণীই ধরা পড়ছে।

সচেতনতা বৃদ্ধিতে সভাসহ বিভিন্নভাবে প্রচরণা চালিয়েও ভয়ঙ্কর এ জাল বা ফাঁদের ব্যবহার ঠেকাতে না পারায় এখন চালানো হচ্ছে অভিযান। এসব অভিযানে নিয়মিত অবৈধ জাল জব্দসহ জেল-জরিমানা করা হলেও মাঠ পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। সে কারণে ক্ষতিকর এ জালের ব্যবহার এখনও বন্ধ করা যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজে থেকে সচেতন না হলে চায়না দুয়ারী নামের এ জালের ব্যবহার রোধ কঠিন হয়ে যাবে। কারণ এ জালে শুধু মাছ নয়, ব্যাঙ, কুচিয়া, সাপসহ জলজ সব প্রাণীই ধরা পড়ছে।

আর সাধারণ মৎস্যজীবীরা বলছেন,চায়না দুয়ারী জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় দিনে দিনে এর প্রতি সবার আগ্রহ বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রশাসিনক অভিযানে অনীহা সৃষ্টি না হয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখার কৌশলও বাড়ছে।

গৌরনদী উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী আলী হোসেন বলেন, দীর্ঘ অনেক বছর যাবত খাল-বিল থেকে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু বর্তমানে চায়না জাল প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জালের বিস্তাররোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে খাল-বিলে কোনো মাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

গৌরনদী উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার বলেন, কয়েক বছর আগেও চায়না দুয়ারি জালের তেমন কোনো চাহিদা ছিলো না। তবে সম্প্রতি এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে এই জাল জব্দ করছেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে কারেন্ট জালের থেকে চায়না দুয়ারি জাল ইফেক্টিভ বলে মনে হচ্ছে।

ছোট ফাঁসের এ অবৈধ জাল দিয়ে বাঁশ বা কাঠের ফ্রেমের মাধ্যমে বিশেষ ফাঁদ বানানো হয়। তারপর এটি পুরোপুরি চায়না দুয়ারি জাল হয়ে যায়। আর বেশ বড় দৈর্ঘ্যের এ ফাঁদে একবার মাছ ঢুকলে আর বের হতে পারে না।

তিনি বলেন, একটি আলপিন এই ফাঁদের ভেতরে পরলে সেটিও বের হবে না, সেক্ষেত্রে মাছের পোনা থেকে শুরু করে সবকিছুই এ ফাঁদে আটকে মারা পড়ছে। তাই এ জালের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ সব থেকে বেশি হুমকির মুখে আছে।

তিনি বলেন, কারেন্ট জাল তো পুরোপুরি অবৈধ, তাই সেটি প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও চায়না জাল ফ্রেমে আটকানো ছাড়াও বাজারে খোলাভাবেই দেখতে পাওয়া যায়। কারণ এ জাল দিয়ে কেউ ক্ষেতে বেড়া দেয়, আবার কেউ ঝাঁকি জাল হিসেবেও ব্যবহার করে।

এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, ফাঁস ছোট হওয়ার পাশাপাশি চায়না দুয়ারি জাল পানিতে বাধার সৃস্টি করে, যা মৎস্য আইন পরিপন্থী। এ জাল বিলাঞ্চলে পানির মধ্যে বাঁশ বা কাঠের সঙ্গে বেধে দিয়ে ঘাষ-কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে এমনভাবে পাতা হয়, কাছে গিয়ে না দেখলে বোঝার উপায় নেই।

তিনি বলেন, এই জাল ২০-৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। আর প্রতিটি জালের মুখের অংশ ছাড়াও কিছুদূর পর পর কাঠ বা বাঁশের চাকতির মতো থাকে এবং জালের বুননে গিঁঠের মতো থাকে। ফলে মুখের যে অংশ বাধা থাকে তা দিয়ে মাছসহ যে জলজ প্রাণিই ভেতরে প্রবেশ করে সে আর বের হতে পারে না। মাছ ছাড়াও এ জালের কারণে সাপ, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়াও মারা পরছে।

তিনি বলেন, দেশ ও মানুষের স্বার্থেই এ জালের ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে জেলেদের সচেতন করতে সভা ও মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এরপর সতর্কও করা হয়েছে। স্থানীয় বাজারসহ খাল ও বিলে এখন নিয়মিতো অভিযান চলছে। জব্দ জাল ধ্বংস করার পাশাপাশি জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে।

তবে নিজ থেকে জেলেরা সচেতন না হলে এ জালের অবৈধ ব্যবহার রোধ করা কঠিন। সেক্ষেত্রে বাইন, মিনি, শিং, কৈ, খলিসাসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির শংকা রয়েছে। এবার জেলেরা আগৈলঝাড়ার বিলে প্রচুর মিনি মাছ পাচ্ছেন, যা ৫-৬ বছর ধরে ছিলো না। এখন জেলেরাই বলছে অভিযানে কারণে অবৈধ জালের ব্যবহার কমে যাওয়ায় বিলুপ্ত মাছগুলোর বংশবিস্তার ঘটেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
এমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।