পাবনা: পাবনার বেড়ার নগরবাড়ি ঘাটের ইজারা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে রাজস্বখাতের এই ঘাটটি নিয়ে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় মেসার্স ঈমান আলী নামক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান টানা কয়েক বছর নগরবাড়ি ঘাটের ইজারা নিয়ে সরকারি শুল্ক আদায় করে আসছে। বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনা অনুসারে ইজারাদার মেসার্স ঈমান আলী নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করে। অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মেসার্স ঈমান আলীকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ইজারা সংক্রান্ত নবায়নের আবেদন নামঞ্জুর করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মেসার্স ঈমান আলী নামক প্রতিষ্ঠানটি হাইকোর্ট বিভাগে ৫৮৪০/২০২১ নং একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। পরে হাইকোর্ট শুনানি শেষে রিট পিটিশনটি আমলে নিয়ে এক মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এরপর সরকারের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ শুল্ক আদায়ে তিন কর্মচারীকে দিয়ে একটি কমিটি করে। এই কমিটি ৩০ জুন ২০২১ থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত শুল্ক আদায় করে। পরে মেসার্স ঈমান আলী নামের ওই প্রতিষ্ঠান খাস কালেকশনের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেন। উচ্চ আদালত তার পক্ষে রায় দেন।
উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে খাস কালেকশন বন্ধ হয়ে গেলে বিআইডব্লিউটিএ তখন ইজারা প্রদান পদ্ধতির ৩৩(খ)(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘স্পট কোটেশন’ পদ্ধতিতে বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবুকে ৩০ জুলাই ২০২১ থেকে ২৮ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত নগরবাড়ি-কাজীরহাট-নরাদহ এলাকার লেবার হ্যান্ডলিং ঘাট/পয়েন্টটির ইজারার কার্যাদেশ প্রদান করে।
উচ্চ আদালতে রিটকারী মেসার্স ঈমান আলীর স্বত্বাধিকারী ঈমান আলী জানান, বিআইডব্লিউটিএর কিছু অসৎ কর্মকর্তা উচ্চ আদালতের আদেশকে অমান্য করেছে। তিনি বলেন, দেশের আড়াইশ’র বেশি নৌবন্দর ও ঘাট একসঙ্গে ইজারা দেওয়া হলেও শুধু এই ঘাটের ইজারা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টালবাহানা বোধগম্য নয়।
এ ব্যাপারে নগরবাড়ি বণিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু বলেন, এই ঘাটের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারসহ সরকারের প্রায় ৬০০ কোটি টাকার আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে ঘাটের ইজারা প্রদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করি।
তবে নগরবাড়ি ঘাটের নতুন কার্যাদেশ পাওয়া ব্যক্তি বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু বলেন, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ এক মাসের শুল্ক আদায়ের কার্যাদেশ দিয়েছিল। সেটি আবার একমাস বৃদ্ধিও করেছে। উচ্চ আদালতের রায় কী সেটা আমার জানার বিষয় নয়। এখানে আইন অমান্য করার প্রশ্নই আসে না। যদি কোনো ধরনের আদেশ অমান্য হয়ে থাকে তাহলে সে বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ’র।
তিনি আরও বলেন, ইমান আলী ঘাটটি না পাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করছেন। এটি পেশি শক্তির বিষয় নয়, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাগজপত্রের বিচার বিশ্লেষণ করে কর্তৃপক্ষ আমাকে কার্যাদেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ আরিচা নদী বন্দরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বন্দর কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বলেন, আদালত অবমাননা হলে তারা তো আদালতে যেতে পারেন। আমাদের (বিআইডব্লিউটিএ) এর আইন উপদেষ্টার পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানে কারো সঙ্গে যোগসাজশ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আদালতের নির্দেশ ও আমাদের আইন উপদেষ্টার মতামত বিশ্লেষণ করে যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘাটটি মেসার্স ঈমান আলীকে ইজারার নির্দেশনা দেয়, তাহলে তাদের ঘাটটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
পাবনার বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জিল্লুর রহমান বলেন, ঘাট কেন্দ্রিক কাজ আমাদের নয়, তবুও আইন শৃঙ্খলার অবনতি হলে সেটা অবশ্যই দেখবো।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
আরএ