ঢাকা, বুধবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

উত্তরের যাত্রায় বিড়ম্বনার নাম নলকা সেতু

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১
উত্তরের যাত্রায় বিড়ম্বনার নাম নলকা সেতু নলকা সেতু। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: হেলে-দুলে কচ্ছপ গতিতে চলা যানবাহনগুলো দেখে মনে হয়-এই বুঝি কাত হয়ে পড়ে গেল। এঁকেবেঁকে চলা এ গাড়িগুলো দেখে পথিকের মনেও জাগে শঙ্কা, কখন যেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

এদিকে ধীরগতির কারণে কখনো দীর্ঘস্থায়ী আবার কখনো থেমে থেকে যানজট লেগেই থাকে। দুর্ভোগ যেন এ পথের যাত্রীদের নিত্যসঙ্গী।  

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের জরাজীর্ণ নলকা সেতু এলাকার নিত্যদিনের চিত্র এটি। এর ওপর দিয়ে ঝুঁকি আর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২৩ জেলার হাজার হাজার পরিবহন।  

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায় সেতুর পশ্চিম পাশে সৃষ্ট হয়েছে বিশাল আকারের বেশ কয়েকটি গর্ত। সেতুর উপরের অংশে উঠে গেছে কার্পেটিং। জয়েন্টগুলো হয়ে পড়েছে নড়বড়ে। সেতুর ৫০ মিটার দূর থেকেই কমিয়ে দিতে হচ্ছে গাড়ির গতি। এ কারণে সেতুর উভয়প্রান্তে সব সময়ই শত শত যানবাহন আটকে থাকে। কিছুক্ষণ পর পরই দু-পাশে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের ঘাম ছুটছে। গত দুই সপ্তাহ ধরেই এমন অবস্থা চললেও টনক নড়েনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ট্রাকচালক হারুন বলেন, নলকা সেতু ও সড়ক সংস্কার না করায় যানবাহনগুলোকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। রাস্তার এই সামান্য অংশে খারাপ অবস্থার কারণে প্রায় ২০/২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।  

বাসচালক সোহেল, সুপারভাইজার শাকিল, ট্রাকের হেলপার রহিম, রংপুর থেকে আসা বাসের যাত্রী সুবল রানা, ঝর্ণা রায়সহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সিরাজগঞ্জ রোড (হাটিকুমরুল গোলচত্বর) এলাকায় এলেই আতঙ্ক শুরু হয়। কতক্ষণের মধ্যে এই অংশটুকু পার হতে পারবো-সেটাই ভাবি।  

পরিবহন শ্রমিক, যাত্রী ও স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য নলকা সেতুটি একটি বিড়ম্বনার নাম। এ সেতুর উপরে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাতে হয়। এতে সৃষ্টি হয় যানজট। কখনো যানজট তীব্র হয়ে হাটিকুমরুল-বগুড়া, হাটিকুমরুল-পাবনা ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের বিশাল অংশ জুড়ে বিস্তৃত হয়।  

সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া আঞ্চলিক সড়কের ফুলজোড় নদীর ওপর নলকা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে আঞ্চলিক এ সড়কটি মহাসড়কে পরিণত হলেও এ সেতুটির কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হয়নি। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩ জেলার যানবাহন চলাচল করছে এ সেতুটি দিয়েই। ফলে সেতুটি একেবারেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।  

হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নলকা সেতুর দুইপাশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর উপরও রয়েছে খানাখন্দ। এখানে এসেই গাড়ির গতি ৫/৭ কিলোমিটারে নামিয়ে দিতে হয় চালকদের। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।  

সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, নলকা সেতুকে ঘিরে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুর পশ্চিমপাশে বিশাল আকৃতির অনেকগুলো গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক বিভাগকে বিষয়টি জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
 
হাইওয়ে পুলিশের (বগুড়া অঞ্চল) পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিন বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একটি লেনে গাড়ি ছাড়তে হয়। আর সেতুর পাশে রাস্তা খারাপের কারণে গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলে। এতে মাঝে মধ্যেই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তার উপর ওইসব গর্তের কারণে একটি গাড়ি হেলে পড়লেই দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। রেকার দিয়ে ওই গাড়ি তুলতে তুলতে উভয়পাশে ব্যাপক যানজট লেগে যায়। এ অবস্থার কারণে পুলিশ ২৪ ঘণ্টায় সেখানে কাজ করছে। সেতু ও সেতুর পাশের রাস্তা দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।  
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাচী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, সেতুর পশ্চিমাংশে বেশ কিছু গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো তুলে কার্পেটিং করতে হবে। বৃষ্টির কারণে এখন কাজগুলো করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলেই কার্পেটিং করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।