ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় মুহিবুল্লাহকে হত্যা 

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১
প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় মুহিবুল্লাহকে হত্যা  হাবিবুল্লাহ

কক্সবাজার: সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে সংগঠনের অফিসে ঢুকে গুলি করে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে খুন করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত প্রত্যাবাসনবিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

অনেকটা প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে চান না। এ হত্যাকাণ্ডের পর পরিবারের অন্য সদস্যরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ।

হাবিব বলেন, বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এশার নামাজের পর অন্য অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে নিজ সংগঠনের আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) অফিসে ঢোকেন মুহিবুল্লাহ। এ সময় তারা বিভিন্ন চ্যানেলের সংবাদ দেখছিলেন। এর ১০ মিনিটের মধ্যে আকস্মিকভাবে সশস্ত্র লোকজন এসে আমার ভাইকে পাঁচটি গুলি করে। তিনটি তার বুকে লাগে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতা নেই। রোহিঙ্গাদের বার্মায় নিয়ে যাওয়ার (প্রত্যাবাসন) জন্য কাজ করতেন তিনি। সে কারণে প্রত্যাবাসনবিরোধীরা আমার ভাইকে হত্যা করেছে।

‘আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। আমরাও এখন হুমমির মুখে। তার স্ত্রী ও নয় ছেলে-মেয়ে আছে। তারা হুমকির মুখে আছে। আমরা সরকারের কাছে আমাদের নিরাপত্তা চাই। ’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ‘আমরা (রোহিঙ্গারা) দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাই। ’

এর আগে তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। ৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহকে রোহিঙ্গারা ‘মাস্টার মুহিবুল্লাহ’ বলে ডাকতো। মিয়ানমারে থাকতে তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। গণহত্যাবিরোধী ওই সমাবেশ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিল। ওই সমাবেশে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব দেওয়া, নিরাপত্তা, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটা ফেরতসহ সাত দফা পূরণ না হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এখনো ওই দাবিতে অনড় রয়েছে রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখ রোহিঙ্গা। সেই সময় বাস্তুচ্যুত অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এ দেশে এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। বর্তমানে নতুন পুরনো মিলে কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবির ও নোয়াখালীর ভাসানচরে বসবাস করছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১
এসবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।