ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

৮ বছর শিকলবন্দি ছোট ভাই, ৩৪ বছর বিছানায় বড় ভাই

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২১
৮ বছর শিকলবন্দি ছোট ভাই, ৩৪ বছর বিছানায় বড় ভাই খোরশেদ আলম ও মোরশেদ আলম

লক্ষ্মীপুর: জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রায় ৩৪ বছর ধরে এক বিছানায় দিন কাটছে বড় ভাই খোরশেদ আলমের (৩৪) আর মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ৮ বছর ধরে শিকলবন্দি হয়ে আছেন তারই আপন ছোট ভাই মোরশেদ আলম (২৪)। আর তাদের দিনমজুর বাবা আজাদ হোসেনও পা ভেঙে প্রায় উপার্জনহীন।

এতে তাদের পুরো পরিবার কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন-যাপন।  

অভাগা এ দুই সহোদরের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের চর লামচী গ্রামে। তারা দিনমজুর আজাদ হোসেন ও খুরশিদা বেগম দম্পতির সন্তান।

স্থানীয়রা জানান, অভাব-অনটনে থাকা পরিবারটি ওই দুই সহোদরের চিকিৎসাও করাতে পারছে না। সরকারিভাবে যদি দুই সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় বহন করার একটা ব্যবস্থা হয়, তাহলে ছোট ছেলেটা সুস্থ হতে পারে। আর বড় ছেলেটা অন্তত হুইল চেয়ারে বসতে পারলেই দুঃখ অনেকটা লাঘব হবে অসহায় পরিবারটির।  

তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মানষিক ভারসাম্যহীন মোরশেদ আলমের পায়ে শিকল বাঁধা। কাউকে দেখলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন।  

পরিবারের লোকজন জানান, জন্মের পর ৭ বছর পর্যন্ত ভালো ছিল মোরশেদ। হঠাৎ একদিন খিঁচুনি উঠে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যান তিনি। পরে অর্থাভাবে তার আর সুচিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। ভারসাম্যহীন হারিয়ে ফেলায় এদিক-সেদিক গিয়ে অন্যের বিনষ্ট করার ভয়ে তার পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে। আর এভাবেই পার হয়েছে দীর্ঘ ৮ বছর। সুস্থ না হলে বাকি জীবনটাও হয় তো এভাবেই কাটাতে হবে তাকে।  

এদিকে, মোরশেদ আলমের বড় ভাই খোরশেদ আলমও ঘরে শুয়ে থেকে কাতরাচ্ছেন। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। দুই হাত-পা বিকলাঙ্গ তার। এভাবেই ৩২ বছর পার করেছেন তিনি। তবে হাঁটার স্বপ্ন দেখেন খোরশেদ।  

হাঁটতে চাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমি একটু হাঁটতে চাই, আমার অসুখের কারণে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছি না।

দিনমজুর বাবা আজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আগে রিকশা চালিয়ে কোনোভাবে তাদের ওষুধসহ যাবতীয় খরচ চালাতাম। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে যাওয়ায় এখন আর রিকশা চালাতে পারি না। বর্তমানে বাড়ির পাশে পান দোকান দিয়ে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু এতে হয় না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। সরকারিভাবে যদি দুই সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হয়, তবে যদি ছোট ছেলেটা সুস্থ হতে পারে। আর বড় ছেলেটা অন্তত হুইল চেয়ারে বসতে পারলেই দুঃখ কিছুটা কমবে।  

মা খুরশিদা বেগম বলেন, প্রতিবন্ধী দুই সন্তান নিয়ে আমরা মানবেতর জীবন-যাপন করছি। প্রতি ৬ মাস অন্তর সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা দিয়ে কিছুই হচ্ছে না। সরকারের কাছে আরও কিছু সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি।

চররুহিতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির পাটোয়ারী জানান, তারা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে হুইল চেয়ারসহ চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে তাদের সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।