ঢাকা: পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, টেকনোলজির ভালো দিক যেমন ব্যবহার করছি, সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে ঝুঁকিও রয়েছে। সেই ঝুঁকির কাছে আমরা কখনোই আত্মসমর্পণ করতে চাই না।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২১ এর উদ্বোধন ও আলোচনা অনুষ্ঠানে আইজিপি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন টেকনোলজি আপডেট হয়। এ জন্য র্যাব-পুলিশকে টেকনোলজি আপডেটের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে থাকতে হবে।
আইজিপি বলেন, পুলিশের সামনে আগামী চ্যালেঞ্জ হলো, সাইবার ওয়ার্ল্ডের স্যোশাল মিডিয়া। পুরাতন অপরাধ কমছে কিন্তু প্রতিনিয়ত সাইবার অপরাধ বাড়ছে। সাইবার ওয়ার্ল্ড দেশের জন্য, মানুষের জন্য হুমকি তৈরি করছে। সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করবো। সাইবার ওয়ার্ল্ডের যে ঝুঁকি রয়েছে, সেই ঝুঁকি থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে।
আইজিপি বলেন, আত্মমর্যাদাশীল জাতি হতে হলে আমাদের আত্মমর্যাদাশীল সমাজ গঠন করতে হবে। সেই সমাজটা হতে হবে অপরাধমুক্ত এবং অপরাধের ভীতিমুক্ত। শূন্য অপরাধ কোনো সমাজে পাওয়া খুব কঠিন। ইউরোপের অনেক জেলখানা এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, সেখানে কোনো অপরাধী পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একটি কমন জেলাখানা রাখা হয়েছে, যাতে করে কেউ পাওয়া গেলে তাদের রাখা যাবে।
বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, রাত তিনটার সময় অথবা ভোর পাঁচটার সময় একাকী একজন নারী মহাসড়ক, রাজপথসহ সব পথে হেঁটে যাবেন ভীতিমুক্ত পরিবেশে, একটি শিশু হেঁটে যাবে ভীতিমুক্ত পরিবেশে—যখন আমরা এইটা অর্জন করতে পারবো তখন আমরা একটি ভীতিমুক্ত ও অপরাধমুক্ত সমাজের কাছাকাছি এসে পৌঁছে যাবো। তবে পুলিশের পক্ষে এটি এককভাবে সম্ভব নয়। এই কাজটি রাষ্ট্রকে করতে হবে পার্টনারশিপের মাধ্যমে। পার্টনারশিপ করতে হবে সমাজের সঙ্গে, নাগরিকদের সঙ্গে। একেই বলা হয় পার্টনারশিপ ইন পুলিশিং।
তিনি বলেন, একাধিকবার বাংলাদেশ জঙ্গিদের কবলে পড়েছে, আমরা প্রতিবারই জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক সমূলে উৎপাটন করতে পেরেছি। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, জনগণের সঙ্গে আমাদের মেলবন্ধন ছিল। প্রতিবার হামলার সময় দেশের মানুষ যেভাবে পুলিশকে সহযোগিতা করেছে, সেই সহযোগিতা না পেলে আমরা সফল হতে পারতাম না। আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা শান্তি ভালোবাসে। জনগণ কখনোই রক্তপাত পছন্দ করে না, এ কারণে জঙ্গিবাদ এ দেশে শেকড়-বাকড় গেড়ে বসতে পারে না।
আইজিপি বলেন, করোনা মহামারির সময় আমরা অনেককে খুঁজে পাইনি, তখন বাংলাদেশ পুলিশ সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে এই সমাজের জন্য, এই দেশের জন্য কাজ করেছে। সন্তানের ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ। অসুস্থকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, মৃতকে দাফন ও সৎকারের কাজ করেছে।
আমরা দেশের জনগণ, সরকার ও রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আমাদের পেশাদার, সেবামূলক, জনবান্ধব, নারীবান্ধব ও শিশুবান্ধব সর্বোপরি মানবিক পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দেশকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। পুলিশিং কার্যক্রমে অধিকতর জনসম্পৃক্ততা ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে তা অর্জন করা সম্ভব। আজকের এই কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সেই ধারণাকে, সেই যোজনাকে আরও সমৃদ্ধি করতে চাই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ও লেখক প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়াও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
এসজেএ/এমজেএফ