ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অপরাধবিহীন একটা দেশ চাই: মুহম্মদ জাফর ইকবাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
অপরাধবিহীন একটা দেশ চাই: মুহম্মদ জাফর ইকবাল  সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিজ্ঞানী ও লেখক প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: বিজ্ঞানী ও লেখক প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, কিছু হলেই আমরা বিদেশের সঙ্গে তুলনা করি। বিদেশে অমক আছে, তমক আছে।

আমি কিন্তু বিদেশের সঙ্গে তুলনা করতে রাজি না। আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেখানে মানুষ অপরাধ করবে না।

শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ শিরু মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২১ এর শুভ উদ্বোধন ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, পৃথিবীর অনেক আধুনিক দেশ রয়েছে যে দেশের অবস্থা ভালো না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেলখানায় যত মানুষ রয়েছে আমার মনে হয় না পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের জেলখানায় এত মানুষ রয়েছে। নেদারল্যান্ড, ডেনমার্কের মতো দেশে যথেষ্ট অপরাধী না থাকায় জেলখানা বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা করছে।

তিনি বলেন, আমি যদি ভালো মানুষ না হই, আমি যত কথাই বলি না কেন কেউ আমার কথা শুনবে না। যখন আমি শুনেছি বাংলাদেশে কমিউনিটি পুলিশিং শুরু হয়েছে তখন খুবই আনন্দিত হয়েছি। আমি কি একজনকে রোগাক্রান্ত করে হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে রেখে সিসিইউতে রেখে লাখ লাখ টাকা খরচ করে তাকে বাসায় আনবো? নাকি চেষ্টা করবো তার রোগটাই না হয়? অবশ্যই চেষ্টা করবো রোগটাই না হয়। আমরা কি কাউকে অপরাধ করতে দিয়ে শাস্তি দেই, নাকি আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করবো যেখানে অপরাধের সংখ্যা কমে আসে।

তিনি আরও বলেন, যদি আমরা জনসেবা করতে চাই আমাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। ইতোমধ্যে অনেকে এই কাজ করে যাচ্ছেন। এক এলাকায় এক পুলিশ অফিসার দেখেন তার এলাকায় যারা মোটরসাইকেল চালান বেশিরভাগ মানুষের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। কারণ কীভাবে লাইসেন্স করতে হয় তিনি জানেন না। তখন তিনি সবাইকে ডেকে নিজে ফরম পূরণ করে সবাইকে লাইসেন্স পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এ কাজ পুলিশের কোথাও লেখা নেই। কিন্তু তিনি করেছেন। আমি অনেক জায়গায় দেখেছি পুলিশ সদস্যরা এসে স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেন। গরিব বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ছোট বাচ্চারা পুলিশের পোশাক দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। কি সুন্দর পোশাক। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। কাজেই ছোট বাচ্চাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য পুলিশের অনেক ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটা প্রাইমারি স্কুলে পুলিশ অফিসারদের যাওয়া উচিত। গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। সেখানে নারী পুলিশ গেলে মেয়েরা উদ্বুদ্ধ হবে। তারা ভাববে কে বলেছে মেয়েরা শুধু ঘরে বসে রান্না করবে, তারা পুলিশ অফিসার হতে পারবে। যদি অনেক ভালো, অনেক বড় কিছু করতে চান তবে সেটা ভলেন্টিয়ারদের দিয়ে করতে হবে। টাকা দিয়ে সব হয় না। ভলেন্টিয়াররা যে কাজ করে সেটা মন থেকে করে। কাজেই এ কমিউনিটি পুলিশিং করার জন্য নিশ্চয়ই অনেক ভলেন্টিয়ার দরকার। সারাদেশে ভলেন্টিয়াররা পুলিশের পাশাপাশি বসে সেই কাজ করবে।

প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল বলেন, যখন আমি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ঢুকি, তখন মনে হয় আমি একটা তীর্থস্থান এসেছি। এ জায়গা যেই জায়গা যেখানে পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে প্রথম বুলেটটি নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। সেই পুলিশ বাহিনীর পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু তারা প্রথম প্রতিরোধ করেছিল।

একাত্তরের ২৫ মার্চের কথা উল্লেখ করে ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমার বাবা একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে আমাদের সবার ঘুম ভেঙে গেল মাইকের একটা শব্দ শুনে, বাংলাদেশে পাকিস্তান আর্মিরা গণহত্যা শুরু করেছে। আমার বাবাকে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করে একটা নদীতে ফেলে রেখেছিল। বাবার মরদেহ পানিতে ভেসেছে তিন দিন ধরে। মৃতদেহ তিন দিন পড়ে থাকলে সাধারণত স্বাভাবিক থাকে না। মানুষ সেটা ধরতে চায় না। কিন্তু আমার বাবা পুলিশের পোশাক পরে ছিলেন, মানুষ আবার বাবাকে ভালোবাসতেন। কারণ তিনি একজন সৎ পুলিশ অফিসার ছিলেন। তাই মানুষজন ধরে তাকে নদীর তীরে এনেছিলেন। এ কথা গুলো বলার কারণ, আমায় ভালো মানুষ হতে হবে। আমি যদি ভালো মানুষ না হই আমি যত ভালো কথাই বলি মানুষ আমার কথা শুনবে না। আমি যদি কিছু করতে চাই আমাকে ভালো মানুষ হতে হবে।  

বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমাদের খুবই দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধু মতো মানুষ সময় পেলেন না। দেশের মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে তার চলে যেতে হলো। সব কিছুতেই তার পরিষ্কার জ্ঞান ছিল। আপনি পাকিস্তান কারাগার থেকে ফিরে এসে প্রথম শিক্ষানীতি তৈরি করলেন। দায়িত্ব দিলেন বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদাকে। তিনি বুঝেছিলেন বিজ্ঞানটা কত প্রয়োজন। কুদরত-এ-খুদা একটি সুন্দর শিক্ষা নীতি তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আনফরচুনেটলি সেটা কার্যকর হয়নি। যদি তার শিক্ষা নীতি কার্যকর হতো তাহলে এতদিন পরে এসে আমাদের জঙ্গি নিয়ে দুর্ভাবনা করতে হতো না।

তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ পুলিশ সদস্য থাকার কথা আমাদের দেশে তার ১০ শতাংশের এক শতাংশ রয়েছে। বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে ইভটিজিং বন্ধ করে দিতে পারবেন। কারণ ওই এলাকার লোকজন যদি জানায় কারা ইভটিজিং করে। এলাকায় বাল্যবিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে, কারণ ওই এলাকার মানুষ জানবে কে বাল্যবিয়ে দিচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।  

এছাড়া সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।