ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঢামেকে স্বজনহীনদের চিকিৎসা চলে হাত-পা বেঁধে 

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২১
ঢামেকে স্বজনহীনদের চিকিৎসা চলে হাত-পা বেঁধে 

ঢাকা: বয়স্ক লোকটির মুখে দাঁড়ি। পরনে কালো রঙের ফুল প্যান্ট।

গায়ে একটি সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি। মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় পুলিশ এনে ভর্তি করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তবে হাসপাতালের বেডের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে রেখে তাকে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
 
ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের ১০৩ নাম্বার ওয়ার্ডে বুধবার (০৩ রাতে) রাতে সরেজমিন গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। একটু খোঁজ নিয়েই জানা গেল, লোকটির কোনো স্বজন নেই। হাসপাতালের কর্মীরা যাকে বলছেন ‘অজানা’ রোগী। একদম অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। মাঝে-মধ্যে কেবল একটু হাত-পা নড়াচড়া করছেন। শুইয়ে রাখা হয়েছে তার নিজের বমির ওপরেই। যেন দেখার কেউ নেই!
 
ওয়ার্ডে দায়িত্বরত কর্মীরা জানান, বুধবার (৩ নভেম্বর) ভোরের দিকে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ মাথায় আঘাতের কারণে রোগীটিকে হাসপাতলে ভর্তি করে। রোগীর কপালে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর হাত-পা নাড়ানোর চেষ্টা করা ছাড়া কোনো সাড়াশব্দ নেই। চিকিৎসকের নির্দেশক্রমে তার চিকিৎসা চলছে কন্টিনিউ ও স্যালাইনও দেওয়া হচ্ছে।
 
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানায়, আঘাতপ্রাপ্ত অজানা রোগীদের এভাবেই হাত-পা বেঁধে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কারণ হাসপাতালে এত লোকবল নেই যে এক রোগীর পেছনে ২৪ ঘণ্টা সময় দেবে।
 
দায়িত্বরত কর্মীরা জানালেন, রোগীটি অজানা, কোনো স্বজন নেই। মাথায় আঘাতের কারণে অচেতন। এ অবস্থায় হাত-পা বেঁধে না রাখলে স্যালাইন, মাথায় সেলাই ও প্রস্রাব করার জন্য ক্যাথেটার সব কিছু টেনে ছিঁড়ে ফেলবে। এ কারণে তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে।
 
রোগীর ভর্তি ফরম থেকে জানা গেল, যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হুমায়ুন কবির তাকে ভোরে হাসপাতালে এনে তাকে ভর্তি করিয়েছেন।

এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির জানান, মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় আসমা আলী সিএনজি স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় কোনো গাড়ির ধাক্কায় ওই ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। আনুমানিক বয়স ৭০ বছর।
 
তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি নেওয়ার পর এক্স-রে ও বাইরে থেকে ওষুধ কেনাসহ সব কিছুই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কারণ তার তো কেউ নেই। যার কেউ নেই, তার পুলিশ আছে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতাল আছে।
 
তিনি আরো বলেন, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ওই লোকটিকে ওই জায়গা দিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। পরে ওই বয়স্ক লোকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে, উনি উত্তেজিত হয়ে যান। একপর্যায়ে তাকে অনুরোধ করি, অ্যাক্সিডেন্ট করতে পারেন, আপনি সাবধানে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটেন। এরপরে আমরা অন্য জায়গায় ডিউটিতে চলে যাই। একটু পরেই সংবাদ পাই, অমুক জায়গায় একজন লোক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। পরে সেখানে গিয়ে দেখি সেই বয়স্ক লোক।
 
বমির মধ্যে নোংরা পরিবেশে আহত লোকটির শুয়ে থাকার বিষয়ে জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আমি জানি না। আমি এখন খোঁজ নিচ্ছি।
 
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ওই বয়স্ক রোগী যেহেতু ভর্তি আছেন, তাই তার চিকিৎসা চলছে। আমি এখনই খবর নিয়েছি। আরো যেন ভালো মতন চিকিৎসা ও সেবা করা হয় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিটিস্ক্যান দরকার হলে দ্রুত তার সিটি স্ক্যান করা হবে। যেহেতু রোগী অজানা, তার স্বজন নেই, এসব রোগীকে অবশ্যই প্রাধান্য দিয়ে চিকিৎসা ও সেবা দেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২১
এজেডএস/ইইউডি/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।