বরিশাল: কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়েও ঘর ও জমি না থাকায় অনিশ্চিত হয়ে যাওয়া চাকুরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আসপিয়া ইসলাম কাজল।
উন্নত দেশ গড়ার জন্য যোগ্য লোকের প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নিজের যোগ্যতায় প্রতিটি পরীক্ষায় পাশ করে আমি আজ এতদূর এলাম।
আমি মনে করি আমি যোগ্যপ্রার্থী, কারণ প্রতিটি পদক্ষেপ আমি যোগ্যতার সঙ্গেই পার করে এসেছি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। উন্নত দেশ গড়ার জন্য যোগ্য লোকের প্রয়োজন। তিনি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। আমি তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তিনি বলেন, আমার জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র সবকিছুই হিজলার ঠিকানায়। কিন্তু আজ তা কোনো কাজে আসছে না। এখানে বলা হয়েছিল যোগ্য প্রার্থীকে নেওয়া হবে, তাহলে কেন শুধু জমির কারণে আমার চাকুরিটা আটকে থাকবে?
আসপিয়ার মা ঝরনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সবাই জানি মেয়ের চাকুরি হয়েছে, তাই আমরা অনেক খুশি। ওর বাবা নেই, খুব কষ্ট করেই পড়াশুনা করাতে হয়েছে। কিন্তু এখন শুনছি আমাদের জায়গা-জমি নেই দেখে চাকরি হবে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিবেদন আমার মেয়েটার যেন চাকরি হয়।
হিজলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ঝন্টু বেপারী বাংলানিউজকে বলেন, আসপিয়ার বাবা মো. শফিকুল ইসলাম ভালো মানুষ ছিলেন। কয়েকবছর আগে স্ট্রোক করে মৃত্যু হয় তার। এরপর থেকেই আসপিয়াদের পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। আসপিয়ার বাবা বেঁচে থাকতে জানিয়েছেন দাদা বাড়িতে বেশকিছু জায়গা জমি পাবেন। এছাড়া হিজলাতে তিনি জমি কিনে ঘর তুলতেও চেয়েছিলেন, তবে হঠাৎ করে মৃত্যুবরণ করায় তা আর হয়নি।
তিনি মানবিক দিক বিবেচনা করে চাকরিটা পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ওরাও তো এ দেশেরই নাগরিক।
বরিশালের রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টের কমেন্টসে পুলিশ সুপারকে বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখতে বলেছেন তিনি।
তিনি লিখেন- আমার কাছে সাংবাদিকরা এসে জানতে চেয়েছেন কেন তার চাকরি হলনা। আমি জানিনা বা জানার সুযোগ নেই তার চাকরি হয়েছে নাকি হয় নাই। কারণ তার পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে। এটা গোপনীয় প্রক্রিয়া। জানতে পেরেছে তার বরিশালে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় চাকরি হচ্ছেনা। আমি তাকে ভেরিফিকেশন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলি এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। পুলিশ সুপারকে বলি তার বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখতে। উনাকে পরামর্শ দেই স্থায়ী ঠিকানা বা নাগরিকত্বের প্রমাণ বা উপায় বের করতে। বরিশালের ডিসির নলেজে দিয়েছি বিষয়টি।
আসপিয়ার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাকুরি হবে না এমন খবরে মর্মাহত তার পরিবার। আসপিয়ার পরিবার জানায়, প্রতিটি পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয় আসপিয়া। তবে যখন থানা থেকে ভেরিফিকেশনে আসা হয়, তখন তারা জানান এখানে জমি না থাকলে চাকুরি হবে না।
আসপিয়া ইসলাম কাজলের জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে জানা গেছে, তিনি বরিশালের হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামের মাতব্বর বাড়ির বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আসপিয়া মাতব্বর বাড়ির মেজবাহউদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়িতে থাকেন স্বপরিবারে। তার পিতা মৃত শফিকুল ইসলাম ভোলা জেলার চরফ্যাশন থেকে প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে হিজলা উপজেলায় এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি ব্যবসা করতেন।
প্রসঙ্গত, পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে বরিশাল জেলায় ১০ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে টিআরসি পদে ৭ জন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আসপিয়া ইসলাম। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া। ২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানেও কৃতকার্য হন আসপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এ নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
এদিকে, বুধবার (৮ ডিসেম্বর) হিজলা থানার এসআই মো. আব্বাস ভেরিফিকেশনে আসপিয়াকে বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২১
এমএস/জেডএ