বরিশাল: ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের কেবিন থেকে শারমিন আক্তারের (২৭) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় শারমিনের স্বামী মাসুদ হাওলাদারকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহত শারমিনের বাবা এনায়েত হোসেন মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে শুক্রবার সকালে শারমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিমুল করিম জানান, লঞ্চের কেবিন থেকে উদ্ধার হওয়া গৃহবধূর মরদেহ স্বজনরা শনাক্ত করেছেন। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী ও শারমিনের বাবা বলেন, তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে স্বামী মাসুদ হাওলাদার। লঞ্চের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে তার উপস্থিতি সেখানে ছিল সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে। মাসুদই আমার মেয়ে শারমিনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জের উত্তর রফিয়াদী এলাকায়। টেলিভিশন দেখে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে জানতে পারি লঞ্চ থেকে যে মেয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে সে আমাদের শারমিন। এরপর বাড়ি থেকে এসে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করি। পরে লঞ্চের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সেখানে মাসুদ হাওলাদারের উপস্থিতি নিশ্চিত হই।
তিনি বলেন, শারমিন আনুমানিক ১২ বছর ধরে ঢাকায় থেকে চাকরি করে। গার্মেন্টেসে চাকুরির সুবাদে সর্বশেষ ঢাকার তেজগাঁও থানাধীনা কুনিপাড়া এলাকায় বসবাস করত বলে আমরা জানি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কামদেবপুরের পশ্চিম গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা জলিল হাওলাদারের ছেলে মাসুদ হাওলাদারের সঙ্গে শারমিনের বিয়ে হয়। তবে এরআগে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে মাসুদ। সে ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানায় আমরা একটি মামলা করি। এরপরই মাসুদের পরিবার আমার মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
তিনি বলেন, বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তালবাহানা করতেন মাসুদ। প্রথমে শারমিনকে আমাদের কাছ আলাদা করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখেন। পরে শারমিনকে রেখে মাসুদ আলাদা থাকতে শুরু করেন। আবার একত্রে থাকাকালীন শারীরিক নির্যাতন করতেন বলেও মেয়ে আমাদের জানিয়েছে।
তিনি বলেন, শারমিন ঢাকা থেকে বরিশালে আসছে এ খবর আগে থেকে আমরা জানতাম না। মাসুদই তাকে নিয়ে হত্যার উদ্দেশে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে বরিশালে আসেন।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিমুল করিম জানান, তারা মামলার ছায়া তদন্ত করবেন আর নৌ পুলিশ করবে তদন্ত।
বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাত জামান বলেন, ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন শারমিনের স্বামী মাসুদ। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা থেকে বরিশাল আসা এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের স্টাফ (গ্রিজার/লস্কর) কেবিন থেকে শারমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে অজ্ঞাত পরিচয়ে থাকলেও পরে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে তার নাম শারমিন বলে শনাক্ত করা হয়। আর পুরো বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিনভর প্রচার হয়।
লঞ্চের স্টাফরা জানান, বৃহস্পতিবার (০৯ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকার সদরঘাট থেকে ওই নারীর সঙ্গে আরও একজন ব্যক্তি এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চে ওঠেন। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে স্টাফ কেবিনটি ভাড়া নেন। রাত ১১টার দিকে একজন লস্কর তাদের টিকেট দিতেও সেখানে যান, তখন স্বাভাবিক অবস্থাতেই তাদের দেখতে পান। ধারণা করা হচ্ছে রাত ৩টার পরে কোনো এক সময় ওই নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর শুক্রবার সকালে লঞ্চটি বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছালে স্টাফ কেবিনের বাইরে থেকে তালা দিয়ে পালিয়ে যায় সঙ্গের ব্যক্তিটি। পরে লঞ্চের লস্কর সোহাগ ওই যাত্রীদের খোঁজে সেখানে গেলে কেবিনের বাইরে থেকে তালা দেওয়া পায়। বিকল্প চাবি দিয়ে সেটি খুলে শারমিনের নিথর মরদেহ দেখতে পান লস্কর সোহাগ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
এমএস/এমআরএ