রাজশাহী: প্রতিমন্ত্রী আর দলীয় পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানের নামে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলার আবেদন করেছেন বগুড়ার একজন আইনজীবী। মামলায় ইউটিবার মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ ওরফে নাহিদ হেলালকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচার (জেলা ও দায়রা জজ) মো. জিয়াউর রহমান এ মামলার আবেদনটি গ্রহণ করেছেন। তবে এখনও কোনো আদেশ দেননি।
তারেক রহমান ও ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সর্ম্পকে কুরুচিপূর্ণ, নারী বিদ্বেষী, কুৎসিত ও মর্যাদাহানীকর মন্তব্য করায় সাবেক তথ্য ও প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ও নাহিদের নামে মামলার আবেদনটি করা হয়েছে।
এ মামলার বাদী অ্যাডভোকেট এ কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বগুড়া জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামেরও উপদেষ্টা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসমত আরা জানান, বিচারক মামলার আবেদন বিবেচনার জন্য গ্রহণ করেছেন। এর মেরিট দেখে পরবর্তী সময়ে আদালতের বিচারক এর আদেশ দেবেন।
মামলার আবেদনের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৌফিক জাহেদী বলেন- তারা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন। এখন আদেশের অপেক্ষায় থাকবেন।
মামলার আবেদনে বাদীর অভিযোগ করেছেন- ১ নম্বর আসামি সাবেক তথ্য ও প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান অতি সম্প্রতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ্য পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান এবং তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও মানহানির বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ জাইমা রহমান ইংল্যান্ডের বিখ্যাত লিংকন ইন থেকে ব্যারিস্টার-এট-ল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে অনেক সুনামের সঙ্গে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। বংশ পরিচয় সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থা বিবেচনায় ব্যারিস্টার জাইমা রহমান বাংলাদেশের অভিজাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান।
কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। এর পরও তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।
১ নম্বর আসামি সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ও ২ নম্বর আসামি একজন ডিজিটাল মিডিয়া উপস্থাপক। যিনি গত ১ ডিসেম্বর তারিখে ১ নম্বর আসামির সাক্ষাৎকার নেন। যা পরে ১ নম্বর আসামি তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে প্রচার ও প্রকাশ করেন।
সরকারের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং উপস্থাপক হিসেবে অভিযুক্ত আসামিরা নিলর্জ্জ, অশালীন মিথ্যাচার এবং নারীর বিদ্বেষী ও নারীর প্রতি অবমাননামূলক বক্তব্য মুহূর্তেই সোস্যাল মিডিয়া তথা ফেইসবুকের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এই বক্তব্য বাদী ও সাক্ষীরাসহ অসংখ্য মানুষ দেখেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
১ নম্বর আসামি সাক্ষাৎকার দেওয়াকালে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিয়া পরিবার এবং ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, নারী বিদ্বেষী, কুৎসিত বর্ণবাদী ও যেকোনো নারীর জন্য মর্যাদাহানীকর ভাষা ব্যবহার করেছেন।
প্রমাণ হিসেবে ওই ভিডিওর বক্তব্য সিডি আকারে মামলার আরজিতে তা সংযুক্ত করেছেন।
এতে সংবিধানের ১৪৮ নম্বর অনুচ্ছেদের তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী ১ নম্বর আসামি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যে সাংবিধানিক শপথ নিয়েছিলেন, তা ক্রমাগতভাবে তার নানাবিধ বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই লঙ্ঘন করেছেন বলেও আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে সামজিক ও ব্যক্তিগতভাবে অপমান, অপদস্থ ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। এটি অবমাননাকর, অপমানজনক এবং আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এর ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
মামলার আবেদন দায়েরের সময় আদালতে রাজশাহী ও বগুড়া আইনজীবী সমিতির নেতারা ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিভিন্ন টকশো ও অনুষ্ঠানে নানা বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও ঢাকাই সিনেমার এক নায়িকার সঙ্গে অডিও ফাঁসের ঘটনায় ডা. মুরাদকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি পদত্যাগ করেন। একইসঙ্গে জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ হারান।
** চট্টগ্রামেও মুরাদের নামে মামলার আবেদন
** মুরাদের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২১
এসআরএস