ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সালথায় প্রধান শিক্ষিকার নামে অনিয়মের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২২
সালথায় প্রধান শিক্ষিকার নামে অনিয়মের অভিযোগ অভিযোগপত্র

ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সিংহপ্রতাব সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা আক্তারের নামে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়টিতে মোট ৯ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।

এর মধ্যে নাজমা আক্তার ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বে থাকলেও বিদ্যালয়ে এসে ক্লাস নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষা কার্যক্রমে তার সক্রিয় আগ্রহ না থাকলেও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে কখনও সরকারি বরাদ্দ এলে তা আত্মসাৎ করতে ঠিকই মরিয়া হয়ে উঠেন তিনি।

প্রধান শিক্ষিকা নাজমা আক্তারের এসব কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ কমিটি বিব্রত ও ক্ষুব্ধ। কমিটির পক্ষ থেকে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর নাজমার নানা অনিয়ম আর অদক্ষতার বিষয় একাধিক লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।

এছাড়া প্রধান শিক্ষিকার নানা নির্যাতনের শিকার সহকারী শিক্ষকরা লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয়নি। অজ্ঞাত কারণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না।  

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ কমিটির সভাপতি মো. আক্কাস মৃধা অভিযোগ করে বলেন, সালথার মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালুকৃত মাত্র একটি বিদ্যালয় রয়েছে। তা হলো, আমাদের সিংহপ্রতাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিগত বছরগুলোতে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার রেজাল্টে এ বিদ্যালয় প্রথম অথবা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও দুঃখের বিষয়, নাজমা আক্তার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসার পর রেজাল্টের অবস্থা চরম খারাপ। এখন আমাদের বিদ্যালয় উপজেলার মধ্যে কোনো অবস্থানেই নেই। বরং ফেলের হার হতাশাজনক। ২০১৮-১৯ সালের জেএসসির নম্বরপত্র শিক্ষার্থীদের বিতরণ করা হয়নি এখনও।

তিনি বলেন, এর কারণ হিসেবে জানতে পারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একদিনও ক্লাস নেননি। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি তার কোনো আগ্রহ নেই। সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে তার কোনো সু-সম্পর্ক নেই।

আক্কাস মৃধা আরও অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন হচ্ছে না। করোনাকালীন সময়ে তিনি স্কুলে এসে বেঞ্চের লোহার কাঠামো, টিন, বই ও গ্রিল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। সে সময় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় অনেক সমালোচনা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের স্কুল লিভিং ইমপ্রুভমেন্ট প্রোজেক্ট (এসএলআইপি) ও রুটিন মেরামতের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ কমিটির কাউকে না জানিয়ে ২০ হাজার টাকার কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এমন অবস্থায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকাকে বদলি করে একজন দক্ষ কর্মঠ প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ কমিটি।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গুলশানারা আক্তার, মোসা. তাইফুন্নাহার, সাহেবুল ইসলাম ও কাজী খালিদ অভিযোগ করে জানান, প্রধান শিক্ষিকা নাজমা আক্তারের ব্যবহারে তারা অতিষ্ঠ। স্কুলে এসে একদিনও ক্লাস নেন না তিনি। কোনো কারণ ছাড়াই খারাপ আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকেন তাদের। নাজমা আক্তার একজন অদক্ষ ও অযোগ্য প্রধান শিক্ষিকা। তাকে দিয়ে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।  

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষিকা নাজমা আক্তার বলেন, যেসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে, তা সব মিথ্যা। আমাকে হয়রানি করার জন্য এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। আমার কাছে প্রমাণ আছে, আমি প্রমাণ করতে পারব।

সালথা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নেয়ামত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রধান শিক্ষিকা নাজমা আক্তারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তৈহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সিংহপ্রতাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দু’টি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২২
জেডএ/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।