ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ফোরলেন রাস্তার জমির ক্ষতিপূরণ না দিয়ে শুরু হয়েছে ব্রিজের কাজ

মো. রোমান আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২২
ফোরলেন রাস্তার জমির ক্ষতিপূরণ না দিয়ে শুরু হয়েছে ব্রিজের কাজ

শরীয়তপুর: শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিস থেকে জাজিরা-নাওডোবা-কাঁঠালবাড়ি পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ পর্যন্ত মহাসড়কে ফোরলেন রাস্তার জমি অধিগ্রহণ করে জমির মালিকের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করে কাজিরহাট ব্রিজের কাজ শুরু করার অভিযোগ করেছে জমির মালিকরা।  

জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার জন্য আদালতে মামলাও করেছেন।

সড়ক জনপথ বিভাগ বলছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ইতোমধ্যে ৪০ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। বাকি টাকা ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিয়ে দিবে। জমির মালিকরা তাদের পাওনা পেয়ে যাবেন। আমরা স্থানীয়দের সহযোগিতা চাই।

শরীয়তপুর সড়ক জনপথ বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিস থেকে জাজিরা-নাওডোবা কাঁঠালবাড়ি পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ পর্যন্ত ফোরলেন মহাসড়কে চলতি অর্থবছরে ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজ ও প্রেমতলা কীর্তিনাশা নদীর উপরে ব্রিজ এবং জাজিরায় কাজিরহাট ব্রিজ নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজিরহাট ব্রিজ ও প্রেমতলা ব্রিজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রেমতলা ব্রিজের কাজ চলমান রয়েছে। জমির মালিকরা জমির অধিগ্রহণের টাকা না পেতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঘর সরাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে মূল সড়কে শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১ নম্বর প্যাকেজটি গত ২ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১০৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ গত রমজান মাসে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগের কাছে ২২টি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এ সড়কে জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ খাতে ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৪০ কোটি টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান জানান।

তিনি আরও জানান, এখনো জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এখনো বেশিরভাগ জমির ৪ ধারা, ৬ ধারা, ৭ ধারা, ৮ ধারা বাকি। এসব কাজ শেষ হলেই কেবল চূড়ান্ত হবে অধিগ্রহণের কাজ। তারপরে টাকা পরিশোধের বিষয়।  

জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে কাজিরহাট ব্রিজের মূল সেতুর পূর্ব পাশের কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করে কাজ শুরু করায় এলাকার পাওনাদাররা ফুসে ওঠে। তারা ব্রিজের কাজ বন্ধ করে দিয়ে ব্রিজের পূর্ব পাড়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

কাজিরহাট দক্ষিণ দুবলদিয়া কাজিকান্দি গ্রামের জমির মালিক জসিম উদ্দিন আকন বলেন, আমার ১ একর ৮০ শতাংশ জমি থেকে ৩০ শতাংশ ব্রিজের জন্য অধিগ্রহণ করেছে। আমাকে ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা পরিশোধ না করে ব্রিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমি ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগকে বার বার বাধা দিলে ও তারা বাধা উপেক্ষা করে কাজ করছে। বাধ্য হয়ে গত ১১ নভেম্বর আমি সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এরপরেও তারা কাজ করছে। আমি জমি দিতে রাজি আছি। কিন্তু টাকা না পেয়ে কাজ করতে দিবো না।

জমির মালিক হাসান আকন বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে বাবুল আকন নামে এক ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে জোর করে কাজিরহাট ব্রিজের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে না দিয়েই কাজ শুরু করে। আমরা আমাদের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা চাই।  

এ ব্যাপারে মেসার্স জামিল ইকবাল জয়েন্ট বেঞ্চার হাসান টেকনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের  স্বত্বাধিকারী মো. হাসান আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কার্যাদেশ পেয়ে ব্রিজের কাজ শুরু করেছি। ব্রিজের দুইপাশের অ্যাপ্রোচের জমি অধিগ্রহণের পাওনা পরিশোধ না থাকায় জমির মালিকরা বাধা দিচ্ছেন। এতে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। টাকা পরিশোধের বিষয়টি দেখবে জেলা প্রশাসক ও সড়ক বিভাগ। কাজে বিলম্ব হওয়ায় আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেদোয়ানুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখায় ইতোমধ্যে বেশকিছু টাকা জমা দিয়েছি। দুটি ব্রিজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দুটি ব্রিজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। জমির ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পরিশোধ করবে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা পেলে কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান আছে। অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলেই  জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।