বরিশাল: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও তার স্বামীকে হেনস্থা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আর এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় দুটি বাড়ি ও একটি পাঠাঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ঘটনাটির প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করলে শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে ও পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসে রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তবে শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী ও স্বজনকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। আর বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার না করা হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা জুড়ে এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার সাইদুল আলম লিটনের অনুসারী জাহিদ হোসেন জয় নামের এক যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রায়ই উত্ত্যক্ত করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক ছাত্রী তার স্বামীকে নিয়ে পাশের আনন্দ বাজার এলাকায় ঘুরতে গেলে তাদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায় জয় ও তার সহযোগীরা এবং মেম্বার লিটনের উপস্থিতিতে ওই ছাত্রী ও তার স্বামীকে মারধর করা হয়। এসময় ওই ছাত্রী নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও সঙ্গে থাকা ব্যক্তি তার স্বামী বলে পরিচয় দিলেও বখাটেরা নানানভাবে হেনস্থাও করে তাদের।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী জানান, বেশ কয়েকজন লোক যখন ওই ছাত্রী ও তার স্বামীকে হেনস্থা এবং মারধর করছিল, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে আমরা সেখানে যাই এবং ওই ছাত্রীর পক্ষে অবস্থান নেই। এসময় মেম্বার লিটন ও জয় আমাদের ওপরও চড়াও হয়, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা চলে আসলে হামলাকারীরা সরে যায়। এরপর গোটা বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং মেম্বার লিটন ও জয়ের গ্রেফতার দাবিতে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে। যদিও কিছু সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম ইয়ামিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই আনন্দ বাজার এলাকায় এক শিক্ষার্থী তার স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে যায়। এ সময় তাদের সাথে অশোভন আচরণ করে মেম্বার লিটনের অনুসারী জয় সহ কিছু লোকজন।
এসময় ওই ছাত্রী ও তার স্বামীকে মারধর করলে, বিষয়টি ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল জানান, শিক্ষক ও পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নিলেও ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
সেই অনুযায়ী বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১০ টার মধ্যে লিটন মেম্বার ও জয়কে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না আনা হলে নতুন করে আন্দোলনের পথ বেছে নিবে শিক্ষার্থীরা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বার বার নানান অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে, কিন্তু কোন ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় নতুন নতুন ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে লিটন মেম্বারের ভাই ফারুক হোসেন ও জয়ের মা জোসনা বেগম জানান, রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হঠাৎ করেই ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক’শ শিক্ষার্থী লাঠিসোটা নিয়ে ঢুকে পড়ে। তারা শেখ রাসেল ক্লাব ও সুকান্ত আব্দুল্লাহ পাঠাঘর, লিটন মেম্বার ও জয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়িতে হামলা চালাতে আসছে এমন খবরে দরজায় তালা দিয়ে আমি বাহিরে যাই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাড়িতে হামলা চালিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। এরপর ঘরের ভেতরে থাকা ফার্নিচার, টেলিভিশনসহ সবকিছু ভেঙে ফেলে।
তার অভিযোগ হামলার সময় ঘরের ভেতরে লুটপাট চালিয়ে স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের সকল দাবি আমরা শুনেছি। প্রশাসন কাজ করছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
বন্দর থানা পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা হয়েছে, তাদের মামলা দায়েরের জন্য বলা হয়েছে। সেসঙ্গে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে তারপরও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২২
এমএস/জেআইএম