রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলার মাটি পান চাষে উপযোগী। এ জেলার পানের স্বাদ মিষ্টি হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বালিয়াকান্দি উপজেলাতে ৮৮ হেক্টর জমিতে মিষ্টি পান ও সাচি পানের আবাদ করা হয়েছে। ৬৫৮টি মিষ্টি পানের বরজ, ১৫৬টি সাচি পানের বরজসহ ৮১৪টি বরজে ৮৮ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়।
মিষ্টি পান চাষের উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত বালিয়াকান্দি উপজেলা। এ অঞ্চলের পানের সুখ্যাতি বহু পুরনো। এখানে সাধারণত দুই জাতের পান উৎপাদন হয়। মিষ্টি পান আর সাচি পান। এখানকার মিষ্টি পান জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৮টি দেশে রপ্তানি করা হতো। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে প্রতি বছর কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। অনেক সময় পান চাষিদের বেকায়দায় পড়তে হয়। কারণ রোগের বিষয়ে কৃষি বিভাগে নেই কোনো পরামর্শের সুযোগ।
পান চাষি গনেশ মিত্র জানান, বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি, বেতেঙ্গা, চরআড়কান্দি, ইলিশকোল, স্বর্প বেতেঙ্গা, খালকুলা, বালিয়াকান্দি, বহরপুর, যদুপুর এলাকায় ব্যাপক পানের আবাদ হয়। তারা পূর্ব পুরুষের আমল থেকে পানের চাষ করে আসছেন। পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারাও পান চাষ করছেন। তবে এখন পানের দাম একেবারেই কম হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। ৮০টি পান আগে ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হতো সেই পান এখন মাত্র ৪-৫ টাকা দাম। তবে বাজারে একেকটি পান কিনে খেতে গেলে ঠিকই ৫ টাকা দিয়েই কিনে খেতে হয়। তাহলে আমাদের অবস্থা কি আপনারাই বোঝেন।
বাবাকে পানের বরজে সাহায্য করতে আসা কলেজছাত্র সুজন মিত্র জানান, এ অঞ্চলে সাচি ও মিষ্টি পান প্রচুর জন্মে। মিষ্টি পান রাজবাড়ী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার চাহিদা মিটিয়ে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল, সৌদি আরব, মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হতো। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতো। করোনার কারণে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারে পানের দাম নেই। এ কারণে আমরা পান চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছি।
পান চাষি আলোক রাহা জানান, করোনার প্রভাবের কারণে পানে লোকসান গুনতে হয়। এ বছর লাভের আশা করছিলাম। তবে কয়েকদিনের ঘন বৃষ্টির কারণে পানের দাম নেই। কৃষি কর্মকর্তারাও কোনো পরামর্শ দিতে পারেন না। তাই বিষয়টি নিয়ে গবেষণার দাবি জানান তিনি। আগে বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর পান বিদেশে পাঠাতে পারছেন না। দাম না থাকার কারণে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।
পান চাষি কার্তিক রাহা, পংকজ ইন্দ্র জানান, পান অর্থকরী ফসল হলেও এর সঙ্গে জড়িত চাষিদের নেই কোনো সহযোগিতা। সরকারিভাবে তাদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে পান চাষকে আরও লাভজনক ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, এখানকার মিষ্টি পান এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ৮টি দেশে রপ্তানি করা হতো। এখন রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তবে পান রপ্তানি করতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজন মতো পান চাষিদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
আরএ