খুলনা: ‘বাংলাদেশের শিল্পকলার পথিকৃত শশীভূষণ পাল কর্তৃক ১৯০৪ সালে খুলনায় প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম অঙ্কন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উন্নয়নের নামে যেটিতে ভাঙা যাবে না।
জনউদ্যোগ, গুণীজন স্মৃতি পরিষদ ও চারুশিল্পী সংসদের মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনা নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে দেশের প্রথম অঙ্কনশিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট’ ভবন ও শিল্পী শশীভূষণ পালের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জনউদ্যোগ, খুলনার নারী সেলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শীলু ও সঞ্চালনা করেন জনউদ্যোগ খুলনার সদস্য সচিব সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাগরিক নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আফম মহসীন, কালের কন্ঠের ব্যুরো প্রধান লেখক সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ হোসেন, সিপিবির মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু, ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর সভাপতি মফিদুল ইসলাম ,দেলোয়ার হোসেন দিলু, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের মহানগর সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুণ্ডু, কোষাধ্যক্ষ রতন কুমার নাথ, খুলনা আর্ট স্কুলের পরিচালক বিধান চন্দ্র রায়, শিক্ষক প্রদ্যুৎ ভট্র, চিত্রশিল্পী প্রশান্ত দাস, চারুশিল্পী সংসদের সুদীপ বিশ্বাস, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসীর এস এম মাহাবুবুর রহমান খোকন, ছায়বৃক্ষের মাবুবব আলম বাদশা, প্রশিকার অজয় কুমার দে, বাকের আহমেদ, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের গৌতম দে হারু, বাসদের কোহিনুর আক্তার কণা, উদ্যামীর নূরুন্নাহার লিলি,গুণীজন স্মৃতি পরিষদের সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত রুমি, মোরশেদ নেওয়াজ শিপলু, অ্যাডভোকেট আফম মুক্তাকুজ্জামান মুক্তা, কাজী বাকী উল্লাহ, এম এ সাদী, অনুপ কুমার মণ্ডল, তামিম আহমেদ প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, কোনোভাবেই উন্নয়নের নামে খুলনার ইতিহাস-ঐতিহ্য নষ্ট করা যাবে না। একে সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের অধিকারী। আড়াই হাজার বছরের অধিক সময় থেকে এদেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও শাসক শ্রেণী গড়ে তোলে বসতি, নগর, ইমারত, প্রাসাদ, দুর্গ, মসজিদ, মন্দির, বিহার, স্তূপ, সমাধিসৌধ প্রভৃতি অসংখ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এসব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অধিকাংশই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে শত বছরের ঐতিহ্য পৌরভবন, ডাকবাংলো ভবন, পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কার্যালয় হারিয়েছি। হারাতে বসেছি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সার্কিট হাউজের নির্যাতন কেন্দ্র, শতবর্ষী নাট্য নিকেতনটি সম্মুখে করনেশন হলো।
বক্তারা আরও বলেন, ১৯৭৪ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ও কবি জসিমউদ্দীন মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্টকে বাংলাদেশের প্রথম অঙ্কনশিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেন। শিল্পী এস এম সুলতান নানা সময়ে এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। শিল্পপ্রেমী শশীভূষণ পাল আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার পর ১৯২০ সালে বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চাঁদ মহারাজ বাহাদুর এ স্কুল পরিদর্শনে করেছেন। তিনি স্কুলটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। ১৯২২ সালের জুলাই মাসে এ স্কুল পরিদর্শনে আসেন তদানীন্তন বাংলার গভর্নর লর্ড লিটন। স্কুল দেখে তিনি খুব খুশি হন। গভর্নর লর্ড লিটন পরে লর্ড রোনাল্ড সে’ও খুলনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন স্কুলটি পরিদর্শন করার জন্য। অযত্ন অবহেলায় আজও যা কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
উল্লেখ্য, নিলামে উঠেছিল দেশের প্রথম শিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট। প্রায় শত বছরের পুরনো ভবনটির নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে দরপত্র জমা দিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা ঐতিহ্যবাহী এ ভবনটি ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১৩ জানুয়ারি) নিলাম স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
এমআরএম/এএটি