ফরিদপুর: ফরিদপুরে চিকিৎসকের পরিবর্তে অপ্রশিক্ষিত নার্স দিয়ে গর্ভবতী মাকে সিজার করার সময় নবজাতকের কপাল কেটে ফেলে ৯টি সেলাইয়ের ঘটনায় আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক, দুই পরিচালকসহ চারজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সুমন রঞ্জন বলেন, এ মামলায় আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান রহিমা রহমান, তার দুই ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকারিয়া ওরফে পলাশ মোল্লা ও মো. আল হেলাল মোল্লা এবং ওই হাসপাতালের নার্স দাবি করা আয়া চায়না বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে চায়না বেগমকে ওই হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স হিসেবে দাবি করা হয়। কিন্তু পরে পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে চায়না বেগম স্টাফ নার্স নয়, তিনি একজন আয়া।
পুলিশ জানায়, এ মামলার আসামি হিসেবে মো. জাকারিয়া ওরফে পলাশ মোল্লা, মো. আল হেলাল ও চায়না বেগমকে গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে জেলার মুখ্য বিচারিক আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য করে ওই তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে এডিএম মো. লিটন আলীকে।
অন্য তিন সদস্য হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, সদরের ইউএনও মো. মাসুদুল আলম, সদরের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাতেমা করিম।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের এডিএম মো. লিটন আলী বলেন, রোববার কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ওই ক্লিনিকটি ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ হাসপাতালটি স্থাপিত হয় ২০০৭ সালে। ২০১৫ সাল থেকে এ হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ ময়েজউদ্দিন মন্ডল পাড়া গ্রামের শফিক খানের স্ত্রী রূপা বেগমকে (২০) সন্তান প্রসবের জন্য ওই হাসপাতালে আনা হয়। সন্তান প্রসবকালে ওই হাসপাতালের নার্স দাবি করা আয়া চায়না বেগম সিজার করলে নবজাতকের কপালের বাম ভ্রুর ওপরে কিছু অংশ কেটে যায়। পরে ৯টি সেলাই দেওয়া হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২২
এনএইচআর