ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চিরনিদ্রায় শায়িত কাজী আনোয়ার হোসেন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
চিরনিদ্রায় শায়িত কাজী আনোয়ার হোসেন ফাইল ফটো

ঢাকা: আশির দশকের বাংলাদেশে খুব কম যুবকই ছিলেন যার মগ্নতা ছিল না ‘মাসুদ রানা’ থ্রিলারে। অধিকাংশ যুবকই তখন মাসুদ রানার মতো রোমাঞ্চকর চরিত্র হতে চাইতেন।

স্বপ্ন দেখতেন রহস্যময়ী সোহানাকে নিয়ে। সেই ‘মাসুদ রানা’ অধ্যায়ের সমাপ্তিরেখা টেনে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ‘মাসুদ রানা’র সষ্ট্রা কাজী আনোয়ার হোসেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) বাদ আসর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে তার দাফান সম্পন্ন হয়। এর আগে সেগুনবাগিচা জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় তার জানাজা।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মারা যান কাজী আনোয়ার হোসেন। এরপর থেকে তার মরদেহ ফ্রিজিং ভ্যানে করে কাকরাইলের কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার সেগুনবাগিচার বাসভবনে।

কাজী আনোয়ার হোসেনের বাসভবনেই অবস্থিত সেবা প্রকাশনী। যার মাধ্যমে ষাটের দশক থেকে বাংলাদেশে পাঠক সৃষ্টির এক অনন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। তার অনন্ত যাত্রার পর্বও শুরু হয় এ স্থান থেকে। শেষবারের মতো কাজী আনোয়ার হোসেনকে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে তার মরদেহ আনার পর পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে এলাকাবাসী, পাঠক-ভক্তরা সেখানে ভিড় জমান।

কাজী আনোয়ার হোসেনকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তার শ্যালিকা ও বিশিষ্ট শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে চলে যান।

শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সেবা প্রকাশনীর লেখক নিয়াজ মোরশেদ। তিনি বলেন, এ দেশের পাঠক সৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। হুমায়ূন আহমেদের আগেই তিনি এ দেশে বই পড়ার পথ তৈরি করেছিলেন। এমনকি জেলায় জেলায় নিজের গাড়িতে চড়ে মাইকিং করে বই বিক্রি করেছিলেন।

সেগুনবাগিচার বাসভবনে ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা একজন যোদ্ধা মানুষ ছিলেন। সব সময় সাহস নিয়ে বেঁচেছেন। এ মানুষটি পরিবারকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন।

জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মাসুদ রানা স্বত্বাধিকার নিয়ে একটি মামলা লড়েছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সে বিষয়ে তার পুত্রবধূ মাসুমা মায়মূর বলেন, ৪৩ বছর ধরে মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজ লিখেছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তার বইগুলোর লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিম নিজেকে দাবি করেন। কপিরাইট অফিস ও হাইকোর্টের রায় নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তবে এ বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত এবং বিচারাধীন।

কাজী আনোয়ার হোসেনকে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি না দেওয়ায় আক্ষেপ করে তার চাচাতো ভাই কাজী রওনাক হোসেন বলেন, অনেক অযোগ্য লেখক রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু কাজী আনোয়ার হোসেন যিনি এদেশের কিশোর-তরুণদের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করে অবক্ষয় থেকে মুক্ত রেখেছিলেন, সেই তিনি লেখক হিসেবে কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। এটা আমাদের কষ্ট দেয়।

সেগুনবাগিচার বাসভবন থেকে কাজী আনোয়ার হোসেনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সেগুনবাগিচা জামে মসজিদে। সেখানে বাদ যোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, মায়ের কবরে তাকে দাফন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
এইচএমএস/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।